বাংলাদেশকে কোনো আশ্বাস দেয়নি ভারত
২৩ অক্টোবর ২০১৭দুই দিনের সফরে রবিবার সকালে ঢাকায় আসেন সুষমা৷ সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ কথা জানান৷ গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷
নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসাও করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের শাস্তির কথাও বলেন সুষমা৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য এটা বিরাট বোঝা৷ বাংলাদেশ আর কতদিন এই ভার বইবে? এই সংকটের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মতে, এই পরিস্থিতির দীর্ঘস্থায়ী সমাধান তখনই হতে পারে, যখন রাখাইন রাজ্যে আর্থ-সামাজিক এবং কাঠামোগত অবস্থার উন্নয়ন হবে৷ এমনটা হলে সেখানে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের মধ্যে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷’’ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-র বরাত দিয়ে ডিপিএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সুষমা বলেছেন, ‘‘ভারত মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷’’ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পুরো বিষয়টি সামাল দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
বৈঠকে শেখ হাসিনা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন৷ শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘তাঁর সরকার দেশের ১৬ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান যেহেতু করতে পারছে, এই শরণার্থীদের খাদ্যের ব্যবস্থাও করতে পারবে৷’’
‘প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ’
প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশই ভারতের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বলেছেন, প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকার দেওয়া ভারতের নীতি, এর মধ্যে বাংলাদেশ সবার উপরে৷ তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে চলেছে৷
এদিকে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একজন কর্মকর্তা শনিবার সংবাদ সংস্থা এপি'কে জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য দেশটিকে সমর্থন করছেন তারা৷ তারা সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা জানাতে চান না৷ তারা নিন্দা জানাতে চান সন্ত্রাস এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের৷
জেনিভায় দাতা দেশগুলোর সম্মেলন:
সোমবার জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা জেনিভায় জড়ো হয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার ত্রাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে৷ গত আগস্টের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে৷
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ত্রাণ দিতে এই পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন বলে মনে করছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘‘প্রয়োজনটা অনেক বেশি, কেননা, পরিস্থিতি ভয়াবহ৷’’ তিনি জানালেন, কক্সবাজারের কাছে যেসব শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, তাদের খাদ্য, পানি, আবাসন, শৌচাগারের যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই৷ এছাড়া খুব দ্রুত এই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে রোগ৷ ১০ জন শিশুর মধ্যে ৬ জনই অপুষ্টিতে ভুগছে৷ তবে ত্রাণ আহ্বানের পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইনে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নেতারা৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)