জার্মান সহযোগিতা
৮ এপ্রিল ২০১২বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনা৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও বার বার দুর্যোগের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় এ অঞ্চলের মানুষের সাজানো সংসার৷ ফলে প্রকৃতির করাল গ্রাসে নিঃস্ব হয়ে পড়ে অনেকে৷ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা এসব মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু দেশ জার্মানি৷ জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড এর অর্থ সহায়তা ও তদারকিতে বরগুনা জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করছে স্থানীয় সংস্থা রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন - আরডিএফ৷ বরগুনার আমতলী উপজেলায় এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আরডিএফ৷
২০০৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে জিআইজেড এর সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে পুনর্বাসন প্রকল্প বা কার্প বাস্তবায়ন করছে আরডিএফ৷ চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে পাঁচটি পর্যায়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে তারা৷ এখন নতুন করে শুরু করেছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের জীবিকা ও অভিযোজন প্রকল্প৷ এসব প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় গরিব-দুস্থ মানুষদের উপার্জনমুখী ও স্বনির্ভরশীল করে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করা হয়৷
শুধু তাই নয়, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোনের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির কাজ করছে আরডিএফ৷ পাশাপাশি, বিগত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পথঘাট মেরামত, নতুন রাস্তা ও সেতু তৈরির কাজ করছে তারা৷ আর এসব কাজের সঠিক মান এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত তদারকি করে থাকে জার্মান সংস্থা জিআইজেড৷
আরডিএফ এর সহকারী পরিচালক এনামুল হক ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরলেন এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকাণ্ড এবং এর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের উপকারের কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষের চাহিদা ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে সব্জি চাষ, ছাগল পালন, হাঁস-মুরগি পালন, সেলাই মেশিন, ক্ষুদ্র ও ভাসমান ব্যবসা, রিক্সা-ভ্যান প্রদানসহ আয়বর্ধক কাজে সহযোগিতা করা হচ্ছে৷ এছাড়া তারা যেন এসব কর্মকাণ্ড থেকে কিছুদিন পর ছিটকে না যায়, কিংবা আবারো দারিদ্র্যের কবলে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ফলো-আপ কর্মসূচিও থাকে৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে পশু পালনকারীদের জন্য পশু চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ৷ কৃষি কাজের জন্য রয়েছে কৃষিবিদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা ছাড়াও প্রয়োজনীয় বীজ ও সার সরবরাহ৷''
অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে এনামুল হক বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত প্রায় বিশ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছি৷ এছাড়া প্রায় দুই কিলোমিটার সংযোগ পথ তৈরি করেছি৷ বিশেষ করে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের সাথে, ইউনিয়ন পরিষদের সাথে মূল রাস্তার সংযোগ পথ তৈরি করা হয়েছে৷ এছাড়া বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা যেন না হয় সেজন্য বিভিন্ন জায়গায় ৫০টি ছোট ছোট সেতু তৈরি করেছি৷ পাশাপাশি নদী ভাঙনে যেন রাস্তা ও ঘরবাড়ি ক্ষতির মুখে না পড়ে সেজন্য আড়াইশ মিটার শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে৷ এছাড়া আমরা জার্মান অর্থায়নে এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর করতে ৫০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন