দ্য বব্স পুরস্কার নিলেন রাগিব
৩০ জুন ২০১৪চলতি বছর গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অনেকে৷ ডয়চে ভেলের বাৎসরিক এই আয়োজনের মধ্যেই এক অনুষ্ঠানে দ্য বব্স বিজয়ী বিভিন্ন প্রকল্পের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়৷ এবার মিশর, ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ, ভারত এবং ইউক্রেনের দ্য বব্স বিজয়ী প্রকল্পের প্রতিনিধিরা পুরস্কার গ্রহণ করেন৷
বাংলা ব্রেইলের বব্স জয়
বাংলা ভাষার পক্ষে এ বছর দ্য বব্স এর ‘সেরা উদ্ভাবন' বিভাগে জুরি এবং ‘পিপলস চয়েস' অ্যাওয়ার্ড জয় করে বাংলা ব্রেইল প্রকল্প৷ এই অনলাইন উদ্যোগের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ এবং অডিও বই তৈরি করা হচ্ছে৷ একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে প্রকল্পটি পরিচালনা করা হয়৷
বনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রকল্পটির সমন্বয়ক রাগিব হাসান৷ ডয়চে ভেলের অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ব্রেইল প্রকল্পের পক্ষ থেকে দ্য ববস-এর জুরি অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করে খুবই ভালো লাগছে৷ দৃষ্টিহীন শিশুদের জন্য হাজারো মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে সবসময় প্রস্তুত আছেন আর ক্রাউডসোর্সিং-এর মাধ্যমে সামাজিক অনেক সমস্যাকে সমাধান করা সম্ভব, বাংলাব্রেইল প্রকল্পটি এরই প্রমাণ৷''
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের স্মরণ
রাগিব হাসান দ্য বব্স পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উৎসর্গ করছি৷ জ্ঞানের আলো পাবার অধিকার সবার অধিকার সমান, ভবিষ্যতের দিনগুলাতে এটা হবে সুনিশ্চিত, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷''
প্রসঙ্গত, বাংলা ব্রেইল প্রকল্পের শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে৷ সেসময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে রাগিব জানতে পারেন, বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা স্কুল বর্ষের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ব্রেইল বই হাতে পাচ্ছে না৷
এই খবর পড়ার পর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাগিব হাসান৷ তিনি তৈরি করেন একটি ফেসবুক গ্রুপ৷ এই বিষয়ে রাগিব বলেন, ‘‘ফেসবুকে এই বিষয়ে লেখার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সহস্রাধিক মানুষ সহায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করে৷''
সমৃদ্ধ অনলাইন ভাণ্ডার
রাগিবকে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি৷ বরং বাংলা ব্রেইল প্রকল্প হয়ে উঠেছে ‘ক্রাউডসোর্সিংয়ের' এক চমৎকার উদাহরণ৷ বর্তমানে তাঁর গ্রুপে রয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ৷ যাঁদের অনেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন৷ কেউ ব্রেইল বইয়ের ইউনিকোড সংস্করণ তৈরিতে কম্পোজ করছেন, কেউ বা বইয়ের নির্দিষ্ট অংশ পড়ে তৈরি করছেন অডিও বুক৷ বাংলাব্রেইল ডট অর্গ নামক ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে এ সব কন্টেন্ট যা যে কেউ বিনা খরচায় ব্যবহার করতে পারে৷
রাগিব হাসান জানান, প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একশোর বেশি পাঠ্য বই রয়েছে৷ আমরা ফেসবুকে প্রতিটি বই নিয়ে আলাদা পোস্ট দেই৷ আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবীরা সেখান থেকে নির্দিষ্ট একটি অংশ বেছে নেন এবং টাইপ করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ এবং ৫০ শতাংশ বইয়ের অডিও সংস্করণ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে৷'' এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও নিয়মিত যোগাযোগ করেন বাংলা ব্রেইল প্রকল্পের সঙ্গে৷ তাঁদের চাহিদার ভিত্তিতেও অনেক সময় কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷
উল্লেখ্য, জার্মানির বন শহরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সোমবার বাংলা ব্রেইলের প্রতিনিধি রাগিব হাসান ছাড়াও দ্য বব্স জুরি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন মিশরের আলোকচিত্রী মুসা'আর এলসামির ব্লগ, ভিজ্যুয়েলাইজিং প্যালেস্টাইন ওয়েবসাইট, নারী সাংবাদিকদের ওয়েবসাইট খবর লাহরিয়া এবং ইউক্রেনের ‘ইয়ানুকভিচ লিকস' সাইটের প্রতিনিধিরা৷ তবে পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে দ্য বব্স জয়ী চীনা প্রকল্পের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না৷