বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ভারত সফরের বিশেষ তাৎপর্য
২৩ ডিসেম্বর ২০১৪মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সার্বিক সম্পর্ক, বিশেষ করে যে দুটি বিষয় দীর্ঘদিন ঝুলে আছে, সেই তিস্তা নদীর জলবণ্টন এবং ছিটমহল বিনিময় সম্পর্কে মোদী সরকারের আন্তরিকতা আঁচ করতেই মূলত ভারত সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ৷ অন্তত আমার তো সেটাই মনে হয়৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিং-এর জমানায় ভারতে এসেছেন এবং মনমোহন সিং-ও ঢাকা গেছেন ২০১৩ সালে৷ ঐ দুটি চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে চুক্তিও হয়েছে তখন৷ এখন চুক্তি দুটি রূপায়নের দায়িত্ব বর্তেছে মোদী সরকারের ওপর৷ তাই রাষ্ট্রপতি হামিদ প্রধানমন্ত্রী মোদীসহ ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মত বিনিময় করে একটা ধারণা পেতে চেয়েছেন৷
প্রধানমন্ত্রী মোদী যে আব্দুল হামিদের সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা বোঝা যায় সংসদের জরুরি কাজকর্ম ফেলে রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক থেকে৷ ঢাকা যাতে ছিটমহল হস্তান্তর এবং তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দিল্লির আন্তরিকতা নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ পোষন না করে, তার জন্য মোদী ছিলেন তৎপর ছিলেন৷ তাই তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার এ দুটি ইস্যুর অগ্রগতি সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি মোদীর ব্যাখ্যা: দুটি ইস্যু একসঙ্গে বাস্তবায়নে যেহেতু রাজনৈতিক ঐকমত্য হতে সময় লাগবে, তাই কালক্ষেপ না করে আগে ছিটমহল বিনিময়ের কাজটা সম্পূর্ণ করা হোক৷
আর সেটা করার জন্য যা করা জরুরি, তা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ যেমন রাজনৈতিক ঐকমত্য, সংসদের স্থায়ী কমিটির সবুজ সংকেত, মন্ত্রিসভার অনুমোদন এবং শেষ ধাপে জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাশ করানোর জন্য সংসদে পেশ করা হয়েছে৷ প্রথমে আশা করা হয়েছিল, সংসদের চলতি অধিবেশনেই তা পাশ হয়ে যাবে৷ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সহজেই তা পাশ হয়ে যায়৷ কিন্তু গোল বাঁধে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়৷ সেখানেও বিল পাশ করাতে বেগ পাওয়ার কথা নয়, কারণ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি না করার কথা আগেই জানিয়েছিল৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেয়া নৈশ ভোজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো তা জানিয়েছেন৷ অথচ তা সত্ত্বেও হয়নি৷ সংসদের অধিবেশন হৈ হট্টগোলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাহত হয়েছে৷ তবে সংসদের চলতি অধিবেশনে না হলেও, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাজেট অধিবেশনে অবশ্যই তা হবে বলে জানা গেছে৷ উল্লেখ্য, চলতি অধিবেশন শেষ হচ্ছে ২৩শে ডিসেম্বর৷
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে রাষ্ট্রপতি হামিদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের কাজ সম্পূর্ণ করার খবর নিয়েই তিনি ঢাকায় যাবেন৷ এছাড়া, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে খুবই ইতিবাচক কথাবার্তা হয় দু'জনের৷ আগামী বছর ভারত নাকি আরো বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে৷ নেপাল ও ভুটানের বিদ্যুৎ পেতে ঢাকাকে সাহায্য করতেও প্রস্তুত দিল্লি৷
মোট কথা, ঢাকা-দিল্লি উষ্ণ সম্পর্ক উষ্ণতর হবে বলেই আমার বিশ্বাস৷ না হবারও আপাত কোনো কারণও আমি দেখছি না৷ আমি মনে করি, তিস্তার জল নিয়ে জটিলতা কাটাতে মমতাকে ধীরে ধীরে রাজি করানো সম্ভব হবে, যদি কেন্দ্র অন্যভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়৷ তবে একটা শঙ্কা আমার রয়ে গেছে৷ আর সেটা হলো, ছিটমহলের জমি হস্তান্তের কৃতিত্ব নিয়ে যেন কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক কাড়াকাড়ি শুরু না হয়৷ তাতে সেখানকার বাসিন্দাদের দুর্গতি বাড়বে বই কমবে না৷ এছাড়া দেখতে হবে উভয় অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব যেন বজায় থাকে৷
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অল ইন্ডিয়া রেডিও (আকাশবাণী) এবং দূরদর্শন-এর (টিভি) নিজস্ব সংগ্রহ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে দুটি সিডি উপহার দেন রাষ্ট্রপতি হামিদকে৷ এতে আছে ১৯৭১-৭২-এ ইন্দিরা গান্ধী এবং শেখ মুজিবুর রহমানে ভাষণ, ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক, আলোচনা, বিবৃতি এবং সাক্ষাৎকার৷