পুরাতন নগরী
২৮ আগস্ট ২০১২বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে৷ এরপর তাঁরা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে৷ সেখানে গিয়ে তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন৷
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস সম্পর্কে কথা হচ্ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জয়ন্ত সিংহ রায়ের সঙ্গে৷ তিনি বললেন, ‘‘এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত বাংলাদেশের সবচাইতে প্রাচীন রাজধানী শহর হচ্ছে মহাস্থানগড়৷ প্রাক মৌর্য যুগ, মানে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকে এখানে মানববসতির চিহ্ন পাওয়া যায়৷''
এছাড়া মহাস্থানগড়ে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হতে জানা যায় যে, কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল৷ এই দুর্গনগরীর বাইরে উত্তর, পশ্চিম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে এখনও বিভিন্ন ধরণের প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে যা উপ-শহরের সাক্ষ্য বহন করে৷
জয়ন্ত সিংহ বলেন, ‘‘মহাস্থানগড়ে প্রথম খনন কাজ শুরু করেন আলেকজান্ডার কানিংহাম নামের একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ৷ তিনি ভারতের প্রত্নতত্ত্ব জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন৷ এরপর থেকে আজ পর্যন্ত খননকাজ চলছে৷ ইতিমধ্যে দুর্গনগরীর দুর্গ ছাড়াও কিছু কিছু ভবনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে৷''
শুরুটা কানিংহাম করলেও মহাস্থানগড়ে সবচেয়ে ভালভাবে খননকাজ শুরু হয় ১৯৯১ সালে৷ সেসময় ফ্রান্সের কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিকদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে কাজ শুরু করে৷ জয়ন্ত সিংহ বলেন, ‘‘তাদের গবেষণায় অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে৷ যেমন ভাস্কর্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, মাটির তৈজসপত্র, পুঁতি ইত্যাদি৷''
এছাড়া পাওয়া গেছে প্রাক মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও মুসলিম যুগের কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, রাস্তা, নর্দমা, কূপ, মন্দির, মসজিদ, তোরণ, বুরুজ ইত্যাদি৷ এসব ছাড়াও সেসময়কার নগরজীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা, কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ফলক, মূর্তি সহ মাটি ও ধাতব দ্রব্যাদি ইত্যাদি পাওয়া গেছে৷
এসবের অনেক কিছুই দেখতে পাওয়া যাবে মহাস্থানগড় জাদুঘরে গেলে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন