‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ আশা
৯ ডিসেম্বর ২০১৭বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ছিল একপাক্ষিক৷ সেই নির্বাচনে দেশের তখনকার বিরোধী দল এবং তার মিত্ররা অংশ নেয়নি৷ ফলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের দাবি অনেক দিনেরউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার আগাম নির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তাই সাধারণ নিয়মে মেয়াদ পূর্ণ করে নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে৷ এই নির্বাচন নিয়ে এখনই সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একধরনের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত যা আভাস, তাতে গত নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি ও তার শরিকরা এবারের নির্বাচন বর্জন করবে না৷
আর এই প্রেক্ষাপটে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ‘‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা আশা করি৷''
ইইউ বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশ-ইইউ ২০০১ সালে যে সহযোগিতা চুক্তি সই করে তাতে দুই পক্ষই জাতিসংঘ সনদ মেনে মানবাধিকার সুরক্ষার মূলনীতিগুলোর গুরুত্বের ব্যাপারে একমত হয়৷ মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার দু’পক্ষের কাজের ভিত্তি৷''
ইইউ বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করেছে, ‘‘আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷''
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ'র প্রত্যাশা বিষয়ে ডয়চে ভেলে'র কথা হয় বাংলাদেশ নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ)-এর প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, স্টেকহোল্ডার সবাই৷ নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হলেও তার খুব বেশি দেরি নাই৷ তাই এই জানুয়ারি থেকেই নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যাবে৷ সেই বিবেচনায় ২০১৮ সাল ইলেকশন ইয়ার৷ সব পক্ষই চাইছে তার অবস্থান সংহত রেখে কম ছাড় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে৷ এখন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি৷ তাদের সহযোগী জামায়াত৷ আর জামায়াতের জন্যতো এটা শেষ যুদ্ধের মত৷ তাই তারা চাইবে তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এই নির্বাচনের ফল ঘরে তুলতে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন৷ আর তাতে সব বড় দলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য৷ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার লেবাস দিতে হলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হবে৷ এটাই হল নির্বাচনের এই পর্যায়ের পরিস্থিতি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত হওয়ার সময় পাচ্ছে৷ সামনে সিটি নির্বাচনগুলোতে সে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি নিতে পারবে৷ সংকট মোকাবিলার শিক্ষা পাবে৷ কমিশনকেও পুরো মাত্রায় প্রস্তুত করতে পারবে৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচনের অগে অবশ্য খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যারাই যখন ক্ষমতায় থেকেছে তারা ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে৷ সরকারি দল সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে৷ আমার মনে হয় নির্বাচনের আগে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ বাংলাদেশের ইতিহাস হলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল জিতেছে৷ আর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিরোধী দল জিতেছে৷''