বাংলাদেশে চাপে আছে মুক্ত সাংবাদিকতা
৩ মে ২০১৭আইনমন্ত্রী ওই ধারা বাতিলের কথা বললেও আতঙ্ক কাটছে না৷
ঢাকার একটি অনলাইন পোর্টাল ‘নতুন সময় ডটকম’-এর নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজুকে দু’দিন আগে তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়৷ একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলাও করা হয়৷ এই দু’টি মামলা করে ওয়ালটন নামে একটি ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান৷ দুই মামলায় তাকে রিমান্ডও দেয়া হয়৷ ওয়ালটনের অভিযোগ, ওই নিউজ পোর্টালে তাদের পণ্যের বিরুদ্ধে অসত্য খবর প্রকাশ করা হয়েছে, যদিও বুধবার রাজু দু’টি মামলায়ই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন৷ এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেসরকারি পর্যায়ে আইসিটি আইনের অপব্যবহারের একটি উদাহরণ৷
সরকারিভাবেও এই আইনটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ একুশে টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেছিল আশুলিয়া থানা পুলিশ৷ পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নাজমুলকে পুলিশ ২৩ ডিসেম্বর আটক করে আইসিটি আইনে মামলা দেয়৷ নাজমুল প্রায় দুই মাস কারাগারে আটক থাকার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি জামিনে ছাড়া পান৷ এর আগে সাংবাদিক প্রবীর শিকদার এক মন্ত্রীর জমি দখল নিয়ে প্রতিবদেন করায় আইসিটি আইনের শিকার হয়ে কারাগারে গিয়েছেন৷ তাঁকে আটক করা হয়েছিল তা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ধরে৷ পরে তিনিও জামিন পান৷
গত কয়েক বছর ধরে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়৷ এই আইনের শিকার সাংবাদিক নাজমুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের জন্য এই আইনটি এখন এক মুর্তিমান আতঙ্ক৷ কারণ, এই আইনে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই সরাসরি গ্রেপ্তার করতে পারে৷ আর জামিন পাওয়া সহজ নয়৷ তাই সাংবাদিকদের হয়রানি করতে সরকারের নানা কর্তৃপক্ষ এবং প্রভাবশালীরা এই আইনটি ব্যবহার করছেন৷’’
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সচিবালয়ে বলেছেন, ‘‘আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে৷ আইনচি সংশোধন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে আরেকটি আইন হচ্ছে৷’’ আইনে কী থাকছে তা না জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নতুন এ আইনে মুক্তভাবে কথা বলার সুযোগ অব্যাহত থাকবে৷’’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলে, ‘‘গণমাধ্যমে যেসব কর্মীর বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় মামলা আছে, তারা ন্যায়বিচার পাবেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন৷’’
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ২০১৬ সালে সাংবাদিক হয়রানির ১১৭ টি ঘটনা ঘটেছে৷ এর মধ্যে সরকারি বাহিনীর হাতে ৯ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ হত্যার হুমকি পেয়েছেন ৯ জন সাংবাদিক৷ ২০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ ৫৭ জন সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন৷ আর চলতি বছরে হামলা-হুমকির পাশাপাশি একজন সাংবাদিক নিহতও হয়েছেন৷
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রচলিত হামলা, হুমকির ও নির্যাতনের সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা এখন সাংবাদিকদের জন্য নতুন আতঙ্ক৷ দু'দিন আগেও একজন সাংবাদিককে এই আইনে আটক করা হয়৷ আমরা চাই এই আইনটি বাতিল হোক৷ কিন্তু নতুন আইনটি যেন ভালো হয়৷ নতুন আইনটি একই রকম বা এর চেয়েও খারাপ হলে তো আমাদের কোনো লাভ হবে না৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ তৈরি হয়েছে৷ অদৃশ্য চাপ বা প্রভাবশালীদের হুমকির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ এটা হয়তো সামরিক সরকারের সময়ের মতো সরাসরি হস্তক্ষেপ নয়, তবে এটা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়৷’’
মঙ্গলাবার প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘গত বছর বাংলাদেশ সরকার বিতর্ক ও সমালোচনা ঠেকাতে দমনপীড়ন চালিয়েছে৷ মিডিয়াকর্মীদের হয়রানি ও কর্মক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি দমনমূলক আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...