বাংলাদেশে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল বন্ধ, চলছে লোডশেডিং
৭ জুন ২০২৩দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকছে৷ এর ফলে সবচেয়ে বেশি ভুগছে গরিব মানুষ৷
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বজলুর রশীদ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এত দীর্ঘ তাপপ্রবাহ আমরা আর দেখিনি৷''
পরিস্থিতি সামলাতে হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ যদিও দেশটিতে এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে৷
শেখ হাসিনা সরকার প্রয়োজনীয় কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় দেশটির সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি সোমবার বন্ধ হয়ে গেছে৷
বাংলাদেশের টাকার মান গত বছর ডলারের বিপরীতে ২৫ শতাংশের মতো নেমে গেছে৷ ফলে জ্বালানি আমদানি এবং অন্যান্য পাওয়ার ইউটিলিটির খরচ বেড়ে গেছে৷ চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও চাহিদামতো উৎপাদন করতে না পারায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না দেশের নানা এলাকায়৷
গৃহিনী তানিয়া আক্তার জানান, তার সবচেয়ে ছোট সন্তান বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না, কারণ, এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে৷ তবে ১২ বছর বয়সি কন্যাকে এখনো যেতে হচ্ছে৷
তানিয়া আক্তার আরো বলেন, ‘‘তাদের ক্লাসও বাতিল করা উচিত, কারণ, গরমে শিক্ষার্থীরা অনেক ভুগছে৷ তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷''
তাপপ্রবাহের শুরু এপ্রিল মাসে৷ মে মাসের শুরু অবধি সেটা চলার পর কিছুদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল৷ গতমাসের শেষের দিকে আবার তাপমাত্রা বাড়তে থাকে৷ আবহাওয়া পূর্বাভাষ জানাচ্ছে যে, চলতি সপ্তাহের শেষ অবধি পরিস্থিতি এরকম থাকতে পারে৷
‘‘প্রতি গ্রীষ্মেই বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ দেখা যায়, তবে এ বছরের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক৷ তাপপ্রবাহ সাধারণত কয়েকদিন বা এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়৷ কিন্তু এ বছর তা দুই সপ্তাহ বা আরো বেশি সময় ধরে চলছে,'' বলেন রশীদ৷
‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন' নামের একটি গ্রুপের গবেষণা অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস এবং থাইল্যান্ডে তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি বেড়ে গেছে৷
গত ৩ জুন দিনাজপুরে তাপমাত্রা ৪১.৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল, যা ১৯৫৮ সাল থেকে এখন অবধি সর্বোচ্চ৷
‘‘অতীতে তাপপ্রবাহ শুধু দেশের কিছু অঞ্চলে দেখা যেতো৷ কিন্তু এ বছর তা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের প্রায় সব অংশেই অনুভূত হচ্ছে,'' বলেন রশীদ৷
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, কিছু প্রত্যন্ত জেলায় দিনে ছয় থেকে দশঘণ্টা অবধি বিদ্যুৎ থাকছে না৷
দিনমজুর এবং রাস্তায় পণ্য বিক্রি করা বিক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে এই তাপপ্রবাহ৷ কারণ, সূর্যের প্রখর রোদে তাদের কাজ করতে হচ্ছে৷ তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে যারা বাসায় থাকছেন, তাদের অনেকের আয় কমে গেছে৷
রিকশাচালাক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আমার আয় বেশ কমে গেছে৷ আমি দিনে অন্তত ২০ থেকে ৩০টি ট্রিপ দিতাম৷ এখন তা কমে ১০-১৫টিতে নেমে গেছে৷ এই গরমে স্বাস্থ্যের কারণে এরচেয়ে বেশি কাজ করতে পারছি না৷''
এআই/এসিবি (এএফপি)