আসেম-এ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
১২ জুলাই ২০১৬এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন বা আসেম-এর ১১তম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৪ জুলাই তিন দিনের সরকারি সফরে মঙ্গোলিয়া যাচ্ছেন৷
আসেম শীর্ষ বৈঠকে এশিয়া ও ইউরোপের ৫১টি দেশের রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের যোগ দেবার কথা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশসহ ইউরোপের ৩০টি, এশিয়ার ২১টি এবং আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ান আসেম-এর সদস্য৷
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সেখানে জার্মান চ্যান্সেলর, রুশ রাষ্ট্রপতি, চীনা প্রধানমন্ত্রী, জাপানি প্রধানমন্ত্রী, ইটালীয় প্রধানমন্ত্রী, মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি, মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন৷
জানা গেছে, রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গুলশান হামলাসহ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা এবং তাঁর সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন৷ বাংলাদেশ সরকার যে এরইমধ্যে সন্ত্রাস দমনে সন্ত্রাস দমন আইনসহ আরো নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, তা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী৷ বিশেষ করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি', সামাজিক উদ্যোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং অনুষ্ঠানে নিরপত্তা-নজরদারি তুলে ধরা হবে৷ এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে জঙ্গিবিরোধী বিশেষায়িত ইউনিট, প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী৷
সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গুলশান হামলার পর এই সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি এখানে একেবারে সরাসরি ইউরোপ ও এশিয়ার রাষ্ট্রনেতাদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন৷ এতে করে পারস্পরিক বোঝাপাড়ার একটি পরিবেশ তৈরি হবে আশা করছি৷ এই যেমন সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ এরইমধ্যে মার্কিন সহায়তা নেয়ার কথা বলেছে৷ বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতও৷ তবে এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং ইউরোপের দেশগুলি এবার কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে কথা বলতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী৷ এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সন্ত্রাস দমনে সাহায্যের যে প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যাপারেও আরো বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বলা বাহুল্য, ইটালি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা৷ কারণ গুলশান হামলায় এই দু'টি দেশের নাগরিকরা নিহত হন৷ প্রধানমন্ত্রী এর আগে তাঁদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ তবে এবার সরসরি কথা বলবেন৷ এতে করে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের অবস্থান, হামলাপরবর্তী তদন্ত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট করার সুযোগ তৈরি হবে৷''
মোহাম্মদ জমিরের কথায়, ‘‘গুলশান হামলার পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ আশা করা যাচ্ছে, ইউরোপ এবং এশিয়ার নেতাদের এর জবাব দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷''
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে এক জঙ্গি হামলায় সাতজন জাপানি ও ন'জন ইটালীয় নাগরিকসহ ১৭ জন বিদেশি নিহত হন৷ এছাড়া একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক, দু'জন বাংলাদেশি ও দু'জন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন হামলায়৷ পরে হাসপাতালে মারা যান আটক আরও একজন৷ এরপর শোলাকিয়ায় ঈদের দিনের হামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ চারজন নিহত হন৷ এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য আসেম সম্মেলন এবং ইউরোপ ও এশিয়ার রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক খুবই গুরুত্ব বহন করছে৷
আগামী ১৫ ও ১৬ জুলাই, অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটারে আসেম-এর এই দু'দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে৷