‘বাঙালির প্রতিটি ঘরে মুক্তির স্বাদ পৌঁছায়নি’
১ ডিসেম্বর ২০১১বৈষম্য, মুক্তিযুদ্ধ
বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্য সহ্য করতে পারতেন না এনামুল হক৷ শিক্ষাজীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ একাত্তরের মার্চ মাসে স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল আন্দোলনে নিজেকে সঁপে দেন তিনি৷ এরপর আসল সেই কালোরাত৷ এনামুল তখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে৷ ডয়চে ভেলের কাছে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এভাবে, ‘‘মাতৃভূমির মুক্তির জন্য, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করা একান্ত দরকার৷ এই চিন্তাভাবনা থেকেই আমি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম''৷
ভারতে প্রশিক্ষণ
এপ্রিল নাগাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের দখল নিয়ে নেয় পাকিস্তানি হানাদাররা৷ সুসজ্জিত পাক বাহিনীকে রুখে দেয়ার মত অস্ত্রশস্ত্র তখন মুক্তিবাহিনীর কাছে ছিল না৷ এনামুলরা তখন চলে যান ভারতে৷ সেখানে গিয়ে আবারো সংগঠিত হন তারা৷ জুন মাসে শিলিগুড়িতে অস্ত্র এবং গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এনামুল৷ তিনি বলেন, ‘‘জুন মাসে আমরা শিলিগুড়িতে নিয়মিত প্রশিক্ষণে চলে যাই৷ সেখানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালনা এবং গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা আবারো দেশে ফিরে আসি''৷
সংগঠিত প্রতিরোধ
প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে দখলদার পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এনামুল৷ বিভিন্ন স্থানে হানাদারদের উপর অর্তকিত হামলা চালিয়ে সফলতা অর্জন করেন তিনি৷ এরকমই এক লড়াইয়ে গুরুতর আহত হন তিনি৷ পিঠে গুলি লাগে তাঁর৷ এনামুল বলেন, ‘‘কলাবাড়িতে পাকবাহিনীর খুব কাছাকাছি অবস্থান করছিলাম আমরা৷ আমি ছিলাম কমান্ডার৷ আলো-আঁধারি রাত ছিল৷ পাক বাহিনী আমাকে দেখে ফেলে এবং গুলি করে৷ আমার পিঠে দু'টি গুলি লাগে৷ এরপর ১৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি আবারো যুদ্ধের ময়দানে ফিরে আসি''৷
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
একাত্তরের ডিসেম্বরে স্বল্পসময়ের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সঙ্গ পেয়েছিলেন এনামুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘জাহাঙ্গীর অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন৷ একজন সেনা অফিসার, যিনি পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলেন দেশমাতাকে মুক্ত করার জন্য৷ তিনি ছিলেন দরদী এক মানুষ''৷
১৪ই ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের চূড়ান্ত অপারেশনে শহীদ হন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ পরেরদিন জাহাঙ্গীরের মরদেহ উদ্ধার করেন এনামুলরা৷
অর্থনৈতিক মুক্তি মেলেনি
১৫ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ৷ স্বাধীন বাংলাদেশে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এনামুল হক৷ একাত্তরের এই বীর সেনা মনে করেন, দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক আশা এখনো পুরণ হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি৷ কিন্তু যে চেতনায়, যে উদ্দেশ্যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে৷ সেই চেতনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি৷ তার মানে হচ্ছে বাঙালির প্রতিটি ঘরে মুক্তির স্বাদ এখনো পৌঁছায়নি৷ অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো মুখ থুবড়ে আছে''৷
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে র্বতমান সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এনামুল হক৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে, এমন প্রত্যাশাই করেছেন তিনি৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক