বালোতেল্লির কাণ্ড!
২১ মে ২০১৩মিলানের খেলা কিন্তু ছিল সিয়েনার সঙ্গে৷ এ মরশুমে তাদের শেষ লিগ ম্যাচ৷ মিলান জেতে ২-১ গোলে এবং পয়েন্টের তালিকায় তাদের তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করে – সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ৷ ঐদিনই ফ্লোরেন্স পেস্কারাকে ৫-১ গোলে হারানো সত্ত্বেও মিলানের চেয়ে দু'পয়েন্ট পিছিয়ে থাকে, অর্থাৎ পয়েন্টের তালিকায় চতুর্থ স্থানেই থেকে যায়, অর্থাৎ তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগের বদলে ইউরোপা লিগে খেলতে হবে৷
এ সব মিলিয়েই কিনা বলা শক্ত, কিন্তু মিলানের ‘ডেভিলরা' যখন সিয়েনা থেকে বাসে করে ফ্লোরেন্স পৌঁছায়, সেখান থেকে মিলানের ট্রেন ধরার জন্য, তখন ফ্লোরেন্সের ফ্যানরা তাদের জন্য অপেক্ষা করেছে৷ অবশ্যই অভিনন্দন কিংবা সম্বর্ধনা জানানোর জন্য নয়৷ ব্যাপারটা ঠাট্টা-টিটকিরিতেই সীমিত থাকতে পারতো, কিন্তু মাথা চাড়া দেয় ইটালির তথা ইউরোপীয় ফুটবলের সেই পুরাতন ভূত, যার নাম জাতিবাদ৷
বালোতেল্লি ছাড়বার পাত্র নন
কৃষ্ণাঙ্গ মারিও বালোতেল্লি ও ব্রাজিলের রবিনিও'কে সেই জাতিবাদি গালিগালাজ শুনতে হয়৷ তারাও ফ্যানদের মুখোমুখি হবার প্রস্তুতি নেন৷ কিন্তু পুলিশ আর দলীয় সতীর্থরা মিলে তাদের নিরস্ত করে৷ দৃশ্যত বালোতেল্লিই বেশি মারমুখি ছিলেন – হবারই কথা, কেননা তিনি ইটালীয়, তাঁর গাত্রবর্ণ যাই হোক না কেন৷
পরে বালোতেল্লি তাঁর টুইটে নিজ ঘোষিত অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেন: তাঁকে খেলার মাঠে জাতি তুলে অসম্মান করলে তিনি মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন, তা যদি এসি মিলানকে দশজন খেলোয়াড় নিয়ে খেলতে হয়, তা সত্ত্বেও৷ মনে রাখতে হবে, বালোতেল্লি আগামী সপ্তাহে ইটালির জাতীয় একাদশের ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগদান করছেন ব্রাজিলে কনফেডারেশনস কাপের প্রস্তুতি হিসেবে৷ ক্যাম্পটি হবে আবার ফ্লোরেন্সের ঠিক বাইরে, কোভারচিয়ানোতে৷ পুলিশ নাকি সে'জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে৷
কার লজ্জা? কিসের লজ্জা?
ব্যাপারটা শুধু ইটালি কি ফুটবলের পক্ষেই লজ্জাকর নয়, ইউরোপীয় ফুটবলের পক্ষে এটা বিশেষভাবে লজ্জাকর৷ গত সপ্তাহান্তের কথাই ধরা যাক৷ ইংল্যান্ডে আলবিয়নের হয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে শেষ দু'টি গোলের একটি করেন কঙ্গোর মিডফিল্ডার ইউসুফ মুলুম্বু৷ অন্যটি করেন রোমেলু লুকাকু, তিনিও আফ্রিকার মানুষ৷
এভাবেই চেলসির হয়ে খেলেছেন সেনেগালের ডেম্বা বা৷ বিপক্ষ এভারটনের হয়ে খেলেছেন নাইজিরিয়ার ভিক্টর আনিচেবে৷ টটেনহ্যামের হয়ে খেলেছেন টোগোর মানুষ এমানুয়েল আদেবাইওর৷ ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ইয়াইয়া টুরে৷ ফ্রান্সে খেলেছেন তুলুজের হয়ে গিনির টিনেজ ফুলব্যাক ইসিয়াগা সিল্লা৷ সোশোর হয়ে সেনেগালের ওমর ডাফ৷ জার্মানিতে দেখা গেছে আইভরি কোস্টের দিদিয়ের দিয়ুফকে, যিনি হ্যানোভারের হয়ে খেলেছেন৷ স্টুটগার্টের হয়ে স্কোর করেছেন ঐ আইভরি কোস্টেরই আর্থার বোকা৷ ইটালিতে পাওয়া যাবে ঘানার মানুষ কোয়াডউও আসামোয়াকে, যিনি ইউভেন্তুসের হয়ে খেলেন৷ স্পেনে পাওয়া যাবে গ্রানাডার মতো একটিমাত্র দলে তিনটি আফ্রিকান দেশের প্লেয়ার: সেনেগালের পাপে দিয়াখাতে, মরক্কোর ইউসেফ এলআরাবি এবং নাইজিরিয়ার ওডিয়ন ইঘালোকে৷ এবং তালিকা ওখানেই শেষ নয়৷
এই হলো ইউরোপীয় ফুটবলে আফ্রিকার হস্তাক্ষর – নাকি পদচিহ্ন?
ফুটবলের কিছু ফ্যান যদি ফুটবল তথা মনুষ্যসভ্যতার আদিম যুগে আটকা পড়ে গিয়ে থাকে, তবে সেটা কি ফুটবলের দোষ?
এসি/ডিজি (এএফপি)