বাড়ছে সংকট, হোম কোয়ারান্টিনে মীরজাদী
১৭ এপ্রিল ২০২০চীনের উহান থেকে নভেল করোনা ভাইরাস অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার শুরু করলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের-আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে আসছিলেন।
গত কয়েক দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি অনুপস্থিত থাকলে গণমাধ্যমে তাঁর কোয়ারান্টিন এবং আইইডিসিআরের ‘ছয়জন কর্মীর' করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর ভাসতে থাকে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম মীরজাদীর হোম কোয়ারান্টিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, আইইডিসিআরের চারজন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে আছেন। তাদের সংস্পর্শে যারা ছিলেন, তারা কোয়ারেন্টিনে আছেন।
"মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আক্রান্ত হননি। তবে তিনিও কোয়ারেন্টিনে আছেন।”
মীরজাদী নিজে পরে এসএমএসে জানান, তিনি ভালো আছেন। শুক্রবার তিনি বাসা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন সংবাদ ব্রিফিংয়ে যোগ দেন।
সংবাদমাধ্যমে সংকট বাড়ছে
বাংলাদেশে এরইমধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন এবং দৈনিক পত্রিকার বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। আর তাদের সংস্পর্শে আসা শতাধিক কর্মীকে হোম কোয়ারান্টিনে চলে যেতে হয়েছে।
সর্বশেষ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির চারজন সংবাদকর্মী আক্রান্ত হওয়ায় চ্যানেলটি তাদের সংবাদ প্রচার দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। শুক্রবার থেকে ওই স্থগিতাদেশ কার্যকর হয়েছে বলে জানান দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ চৌধুরী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের বার্তাকক্ষের তিনজন নিউজ প্রডিউসার এবং একজন প্রতিবেদকের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাই আমরা সংবাদ প্রচার স্থগিত রাখছি। তবে আমাদের অন্য সব অনুষ্ঠান চলবে।”
সংক্রমিত কর্মীদের সংস্পর্শে আসা বাকি কর্মীদের হোম কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে এবং বার্তাকক্ষ জীবাণুমুক্ত করে তারপর আবার খবর প্রচার শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
আক্রান্ত হচ্ছেন জরুরি সেবাকর্মীরা
বাংলাদেশে এরইমধ্যে শতাধিক ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিতে গিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। পুলিশ সদস্যরাও উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কে সমাজে এক ধরনের ট্যাবুর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শরীরে উপসর্গ থাকলেও রোগীরা তা লুকিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। এমনকি, করোনা পজিটিভ জানার পরও তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নেওয়ায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আশঙ্কায় কয়েকটি হাসপাতালের নানা বিভাগ বন্ধ করে দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হয়েছে হোম কোয়ারান্টিনে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শুক্রবারের ব্রিফিংয়ে জনগণকে আতঙ্কিত হয়ে তথ্য গোপন করা থেকে বিরত থেকে বেশি বেশি পরীক্ষা করানোর অনুরোধ করেছেন।
বাড়িওলাদের বিরুদ্ধে দুদকের ‘হুঁশিয়ারি'
করোনা সংকট মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষ থেকে বাড়িওলা ও এলাকাবাসীদের বিরূপ আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ অন্যায় আচরণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বৃহস্পতিবার বলেছেন, কোনো বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটে কোনো চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে ওই বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস কী, তা খুঁজে দেখা হবে।
তিনি বলেন, "জাতির এই সংকটময় সময়ে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে জাতির সেবায় নিয়োজিত। এদের সাথে খারাপ আচরণ কিংবা কোনো প্রকার অসম্মান করা আইনগতভাবেই অপরাধ।”
ঢাকা উত্তর সিটির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম স্বাস্থ্যকর্মীদের কেউ এ ধরনের হয়রানির শিকার হলে সিটি করপোরেশনের কাছে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এসএনএল/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)