বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলে কী হবে?
৩১ অক্টোবর ২০২২কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে? আওয়ামী লীগ কী এতে চাপে পড়বে নাকি উল্টো বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিএনপির তো মাত্র কয়েকজন এমপি। তারা পদত্যাগ করলে কোনো সংকট হবে না। সরকার আবার উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্য আসনগুলো পূরণ করবে। এখন বিএনপির অভ্যন্তরীণ পলিসি কী সেটা তো আমি জানি না। নিশ্চয়ই তাদের কোন পলিসি আছে। তবে এতে বিএনপি লাভবান হবে, এটা আমার মনে হয় না। দেশে তো চাপ সৃষ্টি তাদেরই করতে হবে। আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপ না আসলে নানা আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও বিএনপি তো সংসদে কথা বলছে। সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হবে।”
গত শনিবার রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, "আমাদের এমপিরা যে কোনো সময় জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তারা পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন। হারুন প্রস্তুত আছেন, দল নির্দেশ দিলে পদত্যাগ করবেন। রুমিন প্রস্তুত আছেন, জাহিদুর আছেন, তারা দলের নির্দেশ পেলে পদত্যাগ করবেন। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। তাই অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে তার আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, মন্ত্রী-এমপিদের পদত্যাগ করতে হবে। ভোট হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমাদের সাফ কথা বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে, তবে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো পাতানো নির্বাচনে যাবে না, যাবে না।”
পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "দলের সিদ্ধান্তেই আমরা সংসদে আছি, দল চাইলে পদত্যাগ করে চলে আসব।” এতে বিএনপির লাভ না ক্ষতি বেশি হবে? জবাবে জনাব হারুন বলেন, "এখানে লাভ ক্ষতির বিষয় না, আমরা অল্প কয়েকজন সংসদে আছি। যতদূর সম্ভব প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। এই সরকারের অধীনে তো কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। ফলে আমাদের সংসদে থাকা না থাকা নিয়ে কিছুই আসে যায় না। আমাদের দাবির প্রতি সরকার কোন কর্ণপাত করছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সংসদ থেকে চলে আসতে হবে।”
সিদ্ধান্ত জানালে দলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করবেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যে গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, "তাদের সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে কি সংসদ অচল হয়ে যাবে?” রবিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব কথা বলেন তিনি। আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, "হুমকির কী আছে? তারা কয়জন? সাতজন। পদত্যাগের ব্যাপারটা তাদের দলের সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা আমাদের বিষয় নয়।বিএনপির সঙ্গে খেলা হবে। এখনো নির্বাচনের এক বছর বাকি। অনেক সময়। এর মধ্যে কত কিছু ঘটে যাবে। নাটকের পর নাটক। বিএনপি তো রঙ্গে রঙ্গের নাটক। গতবারও আসবে না, আসবে না। পানি ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত ঠিকই এসেছে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে গড়ায়, সেটা দেখুন।”
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলে সংসদের কিছুই যায় আসে না। নতুন করে উপ-নির্বাচন হবে। সংসদ সংসদের গতিতে চলবে। বরং পদত্যাগ করলে বিএনপি উল্টো চাপে পড়বে। তারা নিজেরাই সংকটে পড়বে।”
বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলে কোন সাংবিধানিক সংকট হতে পারে কিনা? জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোন সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা নেই। কারণ তাদের সাত জন এমপি। এতে কোন সমস্যাই নেই। আওয়ামী লীগও যে খুব চাপে পড়বে বিষয়টা তেমনও নয়।”
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে রাজনৈতিক অঙ্গন কী অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে? জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সংসদে তাদের প্রতিনিধি খুব কম। এত কম সংখ্যক সদস্যের পদত্যাগে রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থিতিশীল হবে বলে মনে হয় না। বরং সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে বিএনপি নিজেরাই উল্টো চাপে পড়ে যাবে। কারণ তাদের যে ক'জনই সংসদে আছেন তারা কিন্তু কথা বলছেন। আর সংসদ অধিবেশন বিটিভি ও সংসদ টিভিতে লাইভ দেখানো হয়। ফলে তাদের বক্তব্য সারাদেশের মানুষ দেখতে পারেন। এখন সংসদ থেকে তারা পদত্যাগ করলে জনগনের কাছে এই বক্তব্য আর যাবে না। এতে তাদেরই ক্ষতি হবে। এতে আওয়ামী লীগ যে খুব চাপে পড়বে তেমনটা মনে হয় না।”