অবরোধের সঙ্গে নতুন কর্মসূচি
২৯ জানুয়ারি ২০১৫
অবরোধের ২৪তম দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, ঢাকা মহানগরীসহ ন'টি জেলায় ২৪ ঘণ্টার হরতাল চলছে৷ এর আগেও অবরোধের মধ্যেই টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করেছে বিএনপি জোট৷ এর সঙ্গে অবরোধ অব্যাহত রেখে সহসাই গণমিছিল বা গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি৷ বিএনপি নেতারা মনে করছেন, টানা অবরোধ চালিয়ে যেতে হরতাল, গণমিছিল বা গণসমাবেশের মতো কর্মসূচি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে৷ এর কারণ, রাজধানী ঢাকা এর মধ্যেই অবরোধের চরিত্র হারিয়েছে৷ দেশের অন্যান্য স্থানেও অবরোধ চলছে ঢিলেঢালাভাবে৷ তাই অবরোধের মধ্যেই বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে অবরোধকে চাঙ্গা রাখার কৌশল অবলম্বন করার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি নেতারা৷
তাঁরা মনে করছেন, সরকারের কঠোর মনোভাব এবং নতুন করে ক্রসফায়ার বেড়ে যাওয়া অবরোধে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে৷ এছাড়া পেট্রোলবোমাসহ বাস পোড়ানো ও নাশকতা সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ তাই জনসম্পৃক্তা বাড়িয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই৷ বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ তাঁদের উত্সাহিত করেছে৷ তাই তাঁরা মনে করছেন, অবরোধ অব্যাহত রেখে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিলে তাতে লোক সমাগম হবে৷
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবারের আন্দোলনকে ‘বাঁচা-মরার লড়াই' হিসেবে দেখছেন৷ তিনি তাই কোনোভাবেই অবরোধ থেকে সরে আসতে চাইছেন না৷ বিএনপির মধ্যে যাঁরা অবরোধ স্থগিত করে অন্য কর্মসূচির কথা বলার চেষ্টা করছেন, তাঁরা খালেদার তোপের মুখে পড়ছেন, বিরাগভাজন হচ্ছেন৷
গুলশান কার্যালয়ে টানা ১৬ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হয়ে ১৯শে জানুযারি বিকেলে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের ন'জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে প্রবীণ কয়েকজন সদস্য রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে দলের করণীয় সম্পর্কে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি৷ বাকি কয়েকজন অবশ্য নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন৷ আর টানা অবরোধের বিপক্ষে দেওয়া নেতাদের বক্তব্য ‘কঠোর ভাষায়' খণ্ডন করে অবরোধের পক্ষে ‘অনড়' অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া৷
তিনি বলেন, ‘ডু অর ডাই'৷ যা হবার তাই হবে৷ টানা অবরোধ ছাড়া সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা যাবে না৷ তিনি আরও বলেন যে, অতীতের ভুল পথে তিনি আর পা দিতে চান না৷ বলা বাহুল্য, চেয়ারপার্সনের এহেন কঠোর মনোভাবে নিশ্চুপ হয়ে যান টানা অবরোধবিরোধী নেতারা৷
এদিকে বিএনপির বহু কর্মসূচির ব্যাপারেই শীর্ষ নেতাদের অনেকেই তেমন কিছু জানেন না৷ যেমন ২১শে জানুয়ারি থেকে বিএনপির অরোধের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল দলের স্থায়ী কমিটি বা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়৷ আবার বৃহস্পতিবার থেকে ডাকা ঢাকাসহ ন'টি জেলার হরতালে ঢাকা মহানগরী অন্তর্ভূক্তই ছিল না৷ পরে বিবৃতি দিয়ে ঢাকা মহানগরীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ তাছাড়া সময়সীমাও ১২ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা করা হয়৷ আর এই কর্মসূচিও দেয়া হয় এককভাবে৷
জানা গেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে অবস্থানরত তাঁর বড় ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই কর্মসূচি ঠিক করছেন৷ দু'জনই অবরোধ অব্যাহত রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনড়৷ এ কারণে খালেদা নিজের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার দিনও অবরোধ শিথিল করতে রাজি হননি তাঁরা৷
তাঁরা মনে করছেন, অব্যাহতভাবে এই আন্দোলনে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একমসয় ক্লান্ত হয়ে পড়বে৷ সরকারের ওপরও দেশি-বিদেশি চাপ বাড়বে৷
বিএনপির এক নেতা উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোকোর জানাজায় অনেক মানুষ হওয়ায় সরকার কিছুটা হলেও চিন্তায় পড়েছে৷ তাই আওয়ামী লীগ অবরোধে নিহতদের গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি দিয়েছে শুক্রবার৷ অবশ্য এর বিকল্প হিসেবে বিএনপি আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহয়াতা দেয়ার চিন্তা করছে৷
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান আন্দোলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিত যে আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে যাওয়ার আগে অবরোধ প্রত্যাহার হচ্ছে না৷ আর অবরোধের মধ্যেই জেলায় জেলায় হরতাল বা সারাদেশে হরতাল ডাকা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা কৌশল৷''
তিনি বলেন, ‘‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া এই আন্দোলন নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন৷ কারণ তিনি দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি৷ এছাড়া কর্মসূচি গোপন রেখে সময়মত ঘোষণা করাও একটি কৌশল৷'' তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া কর্মসূচি নিয়ে দলের নির্ভরযোগ্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন৷ তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়াই নেন৷''
আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘টানা অবরোধ চালিয়ে নিতে গণমিছিল বা গণসমাবেশ ছাড়াও আরো নতুন কর্মসূচি আসতে পারে৷ তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ আর তা চূড়ান্ত হলেও আগেভাগে জানার কোনো সুযোগ নেই৷ তবে সময় মতোই জানানো হবে৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘এই আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ আছে৷ তার বড় প্রমাণ আরাফাত রহমান কোকোর ঢাকার জানাজায় বিপুল মানুষের উপস্থিতি৷ তাই আন্দোলনের কৌশল হচ্ছে অবরোধ অব্যাহত রেখে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি ঘোষণা করা৷''
তিনি বলেন, ‘‘কর্মসূচি ঘোষণায় দলের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই, তবে গোপনীয়তা আছে৷ পরিস্থিতির কারণেই এ কৌশল নিতে হচ্ছে বিএনপিকে৷''
আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি বলতে কী মনে করছেন জানতে চাইলে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন ঘোষণা৷''