1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির সমাবেশ নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন

২৭ জুলাই ২০২৩

"বিএনপি চাচ্ছে, তাদের কর্মসূচিতে বড় জমায়েত ঘটিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার।

https://p.dw.com/p/4USoB
বিএনপির সমাবেশমুখী মিছিল (ফাইল ফটো)
বিএনপির সমাবেশমুখী মিছিল (ফাইল ফটো)ছবি: Mortuza Rashed/DW

তবে নির্বাচনের তারিখ যত এগিয়ে আসছে, রাজপথের কর্মসূচি নাশকতার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।"

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে জনদুর্ভোগের এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ব্যাপারে হাইকোর্টের ‘অবজারভেশন' আছে কারণ দেখিয়ে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। খবর, ডেইলি স্টার, সমকাল৷

কিন্তু বুধবার বিকেলে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ওই দুই ভেন্যুর বদলে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবে সূত্রগুলো বলছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, নগরীকে অচল করে দিতে বিএনপির দীর্ঘ অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা আছে।

দৈনিক সমকালের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও একাধিক উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমাবেশ ঘিরে বিএনপির বেশ কিছু পরিকল্পনার তথ্য তাদের হাতে এসেছে। এর মধ্য রয়েছে- ঢাকা থেকে বিএনপির নেতারা জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীকে বেশ কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করার প্রস্তুতি নিয়ে রাজধানীতে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। অনেককে ফোনে মেসেজ দিয়ে কাঁথা-বালিশ ও বেশি করে কাপড়চোপড় নিয়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, সমাবেশ শেষ হওয়ার পরও বিএনপি নেতাকর্মী দাবি আদায়ে সমাবেশস্থলে বসে পড়তে পারেন। এ কারণেই কাঁথা-বালিশ আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তা ও সাইবার মনিটরিংয়ে এরই মধ্যে সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মী বসে পড়ার আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য নিশ্চিত করা উচ্চপদস্থ কিছুসূত্রের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টার লিখেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ব্যবস্থাই গ্রহণ করুক না কেন, বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোলাপবাগ রাজধানীর প্রান্তে অবস্থিত, তাই কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সহজ হবে।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের অনুমতি চাইলেও পুলিশ গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়। ১০ ডিসেম্বর ওই মাঠেই বিএনপির সমাবেশ হয়।

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কে এইচ মহিদ উদ্দিন গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, "পুলিশ যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।"

পুলিশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও (আইএবি) তাদের সমাবেশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।

আইএবির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ডিএমপিকে বলেন, "সমাবেশ স্থগিত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিকাল ৩টায় পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি।"

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে বিএনপির মহাসমাবেশের পরিকল্পনা নিয়ে অন্ধকারে থাকায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন দলের নেতারা।

ডিএমপির একজন পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে বলছেন, "যে কোনো দলকে রাজপথে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়ার আগে বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। বিএনপি চাচ্ছে, তাদের কর্মসূচিতে বড় জমায়েত ঘটিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার। তবে নির্বাচনের তারিখ যত এগিয়ে আসছে, রাজপথের কর্মসূচি নাশকতার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।"

উচ্চপদস্থ এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে জানান, শহরের মূল কেন্দ্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি করার পর নেতাকর্মী ওই এলাকা ত্যাগ করতে না চাইলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। জনদুর্ভোগও বাড়বে। তখন হয়তো বাধ্য হয়ে বলপ্রয়োগ করে তাদের সরাতে হবে।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নজর  রাখেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসেছেন। এ ছাড়া গত ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিতে যারা এসেছিলেন, তাদেরও অনেকে ঢাকা থেকে ফিরে যাননি।

অন্য এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, সমাবেশস্থলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা বিএনপির নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই পল্টন ও সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অনেককে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

জেকে/কেএম