বিচার ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার এক্তিয়ার নিয়ে বিতর্ক
৩ জুলাই ২০১৪প্রাক্তন সলিসিটার জেনারেলকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদের জন্য বিচার বিভাগের সুপারিশ নির্বাহী বিভাগ নামঞ্জুর করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদের জন্য যে চারজনের নামের তালিকা বিচার বিভাগের নির্বাচকমণ্ডলী অনুমোদন করে সরকারের কাছে পাঠান, মোদী সরকারের আইন বিভাগ সেই তালিকা থেকে প্রাক্তন সলিসিটার জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মনিয়ামের নাম বাদ দেন৷ এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম লোধা গত মঙ্গলবার সরকারের এই ‘‘অনভিপ্রেত এবং একতরফা’’ সিদ্ধান্তকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এই নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ মহলে৷ আর এই বিতর্ক থেকেই উঠে এসেছে ভারতে গণতন্ত্রের তিনটি মৌলিক ইস্যু৷
এক, জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি৷ জনগণের কাছে এটা কি মাথা ঘামানোর মত ইস্যু নয়? এটা কংগ্রেস জোট সরকার বা বিজেপি জোট সরকারের মধ্যেকার বিষয় নয়৷ এটা হলো দেশের সাংবিধানিক সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারের কাছে তার গুরুত্ব কতটা? দুই, গণতন্ত্রে বিচার বিভাগ, আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার এক্তিয়ার যে ভাবে ভাগ করা আছে, সেটা কি রাজনৈতিক প্রয়োজনে লঙ্ঘন করা যায়? এক্ষেত্রে তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার কার? তিন, মনমোহন সিং সরকারের আমলে গোপাল সুব্রহ্মনিয়াম ছিলেন ভারতের সলিসিটার জেনারেল৷ তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি করার সুপারিশ করেছিলেন মনমোহন সিং সরকার৷ বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব ক্রমশ ঘোরালো হতে থাকায় সুব্রহ্মনিয়াম নিজেই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন কেন?
প্রশ্ন হলো মোদী সরকার কেন সুব্রহ্মনিয়ামের নাম সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দিলেন৷ এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ কী থাকতে পারে? মনমোহন সিং সরকারের জমানায় টু-জি কেলেঙ্কারিতে গোপাল সুব্রহ্মনিয়াম সরকারের পক্ষে যে সব সওয়াল করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই-এর রিপোর্ট ছিল নেতিবাচক৷ সুব্রহ্মনিয়ামের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে কর্পোরেট এজেন্ট নীরা রাডিয়ার টেলিফোন কথোপকথনের টেপ সিবিআই পরীক্ষা করে দেখেছে৷ তাতেও সন্দেহজনক বিষয় ছিল৷ সন্দেহ আর বিতর্কের বেড়াজাল থেকে রেহাই পেতে সুব্রহ্মনিয়াম তাঁর প্রার্থীপদ শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেন, যাতে এটা নিয়ে আর জলঘোলা না হয়৷ কিন্তু তা হয়নি, বরং জল গড়িয়েছে অনেকটা৷
বিচার বিভাগের এক্তিয়ার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে মোদী সরকার বলেছেন, বিচার বিভাগের প্রতি সরকারের আনুগত্য প্রশ্নাতীত৷ উল্লেখ্য, ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটা নতুন কিছু নয়৷ এর আগেও হয়েছে৷ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়৷ পরে কার্যনির্বাহী এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতার মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে ভারতের গণতন্ত্র অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে আসছে৷ কিন্তু সুব্রহ্মনিয়াম ইস্যু কি নতুন করে ভারতীয় গণতন্ত্রের অশনি সংকেতের কারণ হবে ?