মেয়র সাহেব কবে?
১৩ আগস্ট ২০১৭দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আলোকচিত্রী, অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলমের ফটো ক্যাম্পেইনের শিরোনাম হচ্ছে ‘‘মেয়র সাহেব কবে?''৷ ২০ ফুট বাই ৭ ফুট আকৃতির একটি ব্যানারে শহিদুল আলম তাঁর তোলা কিছু ছবি প্রিন্ট করে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন ১১ আগস্ট থেকে৷ তিনি ব্যানারটি টানিয়ে দিয়েছেন হাতিরঝিলে ঠিক বিজিএমইএ ভবনের সামনে৷ ব্যানারটির সামনের সড়কেই সেদিন সকালে শহিদুল আলম তাঁর আরেক প্রতিষ্ঠান পাঠশালার শিক্ষার্থীদের একটি ক্লাশ নেন৷
কেন এই ফটো ক্যাম্পেইন জানতে চাইলে শহিদুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ৬ মাসের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলেছে৷ কিন্তু কোর্টের সেই আদেশকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে৷ এভাবে আদালতকে যে অবমাননা করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করার দরকার আছে৷
ঢাকার এক মেয়রের বক্তব্য উল্লেখ করে আলোচিত এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘মেয়র সাহেব বলছেন জলাধার দখল করে অবৈধ স্থাপনা করায় তিনি রাজধানীতে বন্যা বা জলাবদ্ধতার সমাধান করতে পারছেন না৷ হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন একটি অন্যতম অবৈধ স্থাপনা৷
‘‘মেয়র সাহেব (আনিসুল হক) নিজে বিজিএমইএ-র সভাপতি ছিলেন৷ প্রতিদিন তিনি অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কারচ্ছেন৷ কিন্তু বিজিএমই ভবন উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না৷ তাহলে আইন একেকজনের জন্য একেকরকম কিনা,'' প্রশ্ন তোলেন আলম৷
আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রতিবাদ কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন নাগরিক৷ নাগরিক হিসেবেই প্রতিবাদ করছি৷ আমার মনে হয় এখন আমাদের নাগরিকদের আরো জোড়াল প্রতিবাদ করা উচিত৷ কেউ হয়তো ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না৷ কেউ হয়তো ক্ষমতার কাছে থাকার সুবিধা নিতে প্রতিবাদ করছেন না, সেটা আমরা বলতে পারবনা৷ কিন্তু প্রতিবাদটা হওয়া প্রয়োজন৷''
প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷ এরপর বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে তিন বছর সময় চাইলে আদালত ৬ মাস সময় দেন৷ আদালত ভবনটি বিজিএমইএ-কে নিজ খরচে ভাঙতে বলেন৷ কিন্তু আদেশের পর পাঁচ মাস পর হয়ে গেলেও ভাঙার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়৷ এই বিষয়ে জানার জন্য বিজিএমই সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি৷ তবে দু'দিন আগে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এটি আমরা ভাঙবো কেন? আমরা উত্তরায় ভবন বানাচ্ছি সেটা শেষ হলে সেখানে চলে যাবো৷''
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে দৃকের শহিদুল আলমের একক প্রদর্শনী ‘‘ক্রসফায়ারের'' মাধ্যমে ‘‘আর নয়'' ক্যাম্পেইনের শুরু হয়৷ এরপর কল্পনা চাকমা গুম, তাজরিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, রানা প্লাজা, ট্যাম্পাকোসহ আর অনেক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অকাল মত্যু, দৃকের কর্মী ইরফানুল ইসলামসহ দেশজুড়ে গুম-খুন-হত্য বিরুদ্ধে দৃক একই শিরোনামে প্রচারণা চালায়৷ এরই ধারাবাহিকতায় ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স' ভাঙার দাবিতে দৃকের ‘মেয়র সাহেব কবে?'- শিরোনামে ফটো ক্যাম্পেইন এখন চলছে৷