বিজেপির নম্বরে নেটফ্লিক্স ও যৌনতার হাতছানি
১৪ জানুয়ারি ২০২০নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতীয় সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে উত্তাল দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে ছাত্রসমাজ পথে নেমে আন্দোলন করছে। বসে নেই কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিও। তারা অভিনব উপায়ে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ে লেগে পড়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি নম্বর জনসমক্ষে এনেছেন। সেই নম্বরে মিসড কল দেওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছেন। এই মিসড কলের অর্থ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতি সমর্থন জানানো। তাঁর ঘোষণার পরই ওই নম্বর ঘিরে নেটদুনিয়ায় আজব কাণ্ড ঘটছে।
বিজেপি সভাপতির দেয়া নম্বরে শুধু নয়া আইনের প্রতি সমর্থন জানানো নয়, আরও নানা পরিষেবা পাওয়ার অঙ্গীকার মিলছে। সবচেয়ে বেশি হইচই বেঁধেছে অনলাইন বিনোদন অ্যাপ্লিকেশন নেটফ্লিক্সকে ঘিরে। এই অ্যাপ ইদানীং ভারতে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মূল্য দিয়ে এর গ্রাহক হতে হয়। অমিত শাহেরে দেয়া নম্বরে ফোন করলে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক হওয়া যাবে নিখরচায়, এমনই বার্তা পাওয়া গিয়েছে টুইটারে। শুধু তাই নয়, এই একই নম্বরে ফোন করলে অন্য পরিষেবা দেওয়ার প্রলোভনও দেখা গিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম যৌনতার হাতছানি। একাকিত্ব কাটাতে শাহের দেওয়া নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে, আবার সেই নম্বর দিয়ে চাকরির বিজ্ঞাপনও উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নারীর ছবি সম্বলিত একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে বিজেপির নম্বরটি দিয়ে বলা হয়েছে, কথা বলতে চাই। এই নম্বরে মিসড কল করুন। কিংবা একটি অ্যাকাউন্টে লেখা হয়েছে, আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে? ফোন কর এই নম্বরে। সেই নম্বরটি অমিত শাহের দেওয়া!
এটা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বিরোধীদের বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, বিজেপি নয়া আইনের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে এই কৌশল নিয়েছে। মানুষ আইনের বিরুদ্ধে বলে তারা বিনোদন থেকে যৌনতার ছদ্মবেশে নিজেদের নম্বর সম্বলিত বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটে প্রকাশ করছে। অনেক মানুষই না বুঝে ওই নম্বরে ফোন করবে, বিজেপি সেটাকে তাদের আইনের প্রতি সমর্থন হিসেবে তুলে ধরবে। বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের অ্যাকাউন্ট কাজে লাগিয়ে এই ছদ্ম-প্রচার চালাচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যে নেটফ্লিক্স তাদের বার্তায় জানিয়েছে, ওই নম্বরের সঙ্গে সংস্থার কোনো যোগ নেই। আদ্যন্ত ভুয়ো নিখরচায় গ্রাহক হওয়ার বার্তা। কিন্তু তাদের এই ঘোষণায় বিতর্ক থামছে না।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এটাকে সাইবার অপরাধ হিসেবে দেখছে। দলের নেত্রী তনুজা চক্রবর্তী বলেন, "এই নম্বরটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটা সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়বে। এই নম্বরে ফোন করে বিনোদনের কোনো অফার আমরা পাইনি। এটা পরিকল্পিতভাবে রটানো হচ্ছে।" অমিত শাহ ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তাঁর দেওয়া নম্বরটি একান্তভাবে বিজেপির, অন্য কোনো সংস্থার নয়। তনুজা বলেন, "যাঁরা নাগরিকত্ব আইনকে সমর্থন করেন, তাঁরা নিজেরাই ফোন করবেন। বহু মানুষ ফোন করছে। এটা বিরোধীদের কাছে চিন্তার কারণ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার। এর পিছনে বিরোধীদের হাত থাকতে পারে। তারা চেষ্টা করতে পারে এই উদ্যোগকে বানচাল করার।"
এই বিতর্কের সহজ সমাধান রয়েছে বলে দাবি করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, বিজ্ঞাপনগুলি কারা পোস্ট করেছে, তাদের নাগাল পেলে রহস্যের সমাধান হবে। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হলেও কোন আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা পাওয়া যাবে। সেই অ্যাড্রেস অনুযায়ী তদন্ত করলেই জানা যাবে, কারা এর পিছনে রয়েছে ও তারা সরকার না বিরোধী পক্ষের।