বিজয়ের দিনে শুধু সাফল্যের কথাই ভাবতে চাই
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ক্ষণিকক্ষণ কেটে গেলো এভাবেই৷ মনে গেঁথে থাকা একাত্তরের নয় মাসের সংগ্রামের চিত্রও একে একে যেন দেখে ফেললাম৷ তারপর যখন বাস্তবে ফিরে এলাম, তখন বর্তমান নিয়ে ভাবনাটা হঠাৎই উঁকি দিল৷ কেমন আছে বাংলাদেশ? কেমন করছে আমার প্রিয় মাতৃভূমি? একটুও বাড়িয়ে বলব না যে, যখনই বর্তমান নিয়ে ভাবতে গেলাম প্রথমেই মনে হলো বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা৷ আসলেই তো, একাত্তরের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে তো তফাৎ অনেক! এবং সেটা ইতিবাচক৷
৪৩ বছর অনেক সময়৷ এর মধ্যে একটা দেশে নিয়ম অনুসারে আমূল পরিবর্তন আসবে, সেটাই স্বাভাবিক৷ তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যের মাত্রাটাই বেশি৷ তাই হয়ত আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাটাই আগে মনে আসছে৷
নিজের জীবন দিয়েই উপলব্ধি করতে পারি সেটা৷ বাবার চাকরি সূত্রে আমরা থাকতাম বাংলাদেশের এক প্রান্তে৷ আর দাদা-নানারা থাকতেন আরেক প্রান্তে৷ ফলে বছরে একবার ছুটিতে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে অনেকটা পথ যেতে হতো৷ এই সময় ফেরিতে করে তিনটা নদী পাড়ি দিতে হতো৷ এ কারণে সকালে যাত্রা শুরু করে কখনো এক বারে বাড়ি পৌঁছাতে পারতাম না৷ মাঝে একদিন কোথাও বিরতি দিতে হতো৷ আশির দশকের শেষের দিকের কথা সেটা৷ যতদূর মনে পড়ে নব্বইয়ের শুরুতেও তেমনই ছিল৷ আর এখন? গাড়িতে করেই সব নদী পাড় হওয়া যায়৷ এখন সকালে রওয়ানা দিয়ে বিকেলের মধ্যেই চলে যাওয়া যায়!
এবার আসি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের কথায়৷ আগে ঘরবাড়িতে কাজেকর্মে সহায়তার জন্য সহজেই কাউকে না কাউকে পাওয়া যেত৷ কিন্তু এখন বেশি বেতন দেয়ার কথা বললেও কাজ হয় না৷ লোক পাওয়া যায় না৷ গ্রামাঞ্চলে মহিলারা এখন নিজেরাই সাবলম্বী হয়ে উঠছেন৷ কোনো কোনো পরিবার তো চালাচ্ছেন নারীরাই৷ শুধু তৈরি পোশাক খাত কর্মী হিসেবেই নয়, গ্রামে নিজ নিজ এলাকায় তাঁরা বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত হচ্ছেন৷
আজকাল পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়-বিক্রয়ের খবর৷ কয়েকবছর ধরে এসবের দাম বাড়লেও ক্রেতা কিন্তু কমছে না৷ এটা কি অগ্রগতির লক্ষণ নয়! তারপর আছে জিনিসপত্রের বাড়তি দাম৷ কিন্তু তাই বলে কি থেমে আছে কেনাকাটা?হয়ত মানুষের কষ্ট হচ্ছে কিনতে, কিন্তু যে হারে দাম বেড়েছে সে হারে যদি মানুষের আয় না বাড়তো, তাহলে তো আর কেনাকাটার সামর্থ্যই থাকতো না৷
একটা সময় ছিল তরুণরা শুধু চাকরির পেছনে ছুটতো৷ কিন্তু এখন নিজেরাই ব্যবসা করছে৷ এতে নিজের লাভ তো হচ্ছেই, সঙ্গে কর্মসংস্থান হচ্ছে আরও কয়েকজনের৷ এভাবে অগ্রগতির তালিকাটা আরও দীর্ঘ করা যেতে পারে৷
তাই বলে কি ব্যর্থতা নেই? হ্যাঁ, সেটা তো থাকবেই৷ কিন্তু আজ বিজয়ের দিনে সেটা না হয় নাই ভাবলাম৷ হাঁটি হাঁটি পা পা করে জন্মভূমিটা যে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই ভাবনা নিয়েই কাটাতে চাই আজকের দিনটা৷