বিদায় ব্রাজিল
৬ জুলাই ২০১৮কাগজে কলমে শক্তিমত্তায় বেলজিয়ামের চেয়ে অনেক এগিয়ে ব্রাজিল৷ ইনজুরি কাটিয়ে রেয়াল মাদ্রিদ তারকা মার্সেলো ফিরেছেন দলে৷ সবমিলিয়ে উজ্জীবিত এক দল নিয়েই মাঠে নামে ব্রাজিল৷ কিন্তু বিধাতা যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নীলহলুদ শিবির থেকে৷ কারণ স্কোরবোর্ড বলছিল অন্য কথা৷
তাদের ইউরোপীয় প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম কাউন্টার অ্যাটাকে বরবারই সফল দল এ বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রথম থেকেই লুকাকু, চাডলি আর ফেলাইনিকে নিয়ে পূর্ণ শক্তির দলই মাঠে নামান ম্যানেজার রবার্টো মার্টিনেজ৷
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই দুই শিবিরের গতিময় ফুটবল এক চমৎকার দ্বৈরথের আভাস দিচ্ছিল৷ যেমন, ৭ মিনিটের মাথায় জটলা তৈরি হয় বেলজিয়ান শিবিরে৷ ব্রাজিলিয়ান থিয়াগো সিলভার পায়ে লাগা দুর্বল বলটি গোলবারে না লেগে বেলজিয়ামের জালেও জড়াতে পারত৷ কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি৷
ফিরতি অ্যাটাকে বেলজিয়ামের সামনে হাফচান্স৷ সেটি ব্যর্থ হলেও চাডলি’র শটটি প্রতিপক্ষের খাঁচায় ঢুকতে পারেনি৷
৯ মিনিটে আবারো ব্রাজিলের আক্রমণ৷ এবারো জটলা৷ কিন্তু এবার মিস করেন পাউলিনিয়ো৷ একবার নয় দু’বার৷
কিন্তু এগুলো কোনোটিই পরিষ্কার সুযোগ নয়৷
তবে ভাগ্যবিধাতা যে ব্রাজিলের সঙ্গে নেই, তার প্রমাণ হয় ১৩ মিনিটে৷ ব্রাজিল সমর্থকদের দুঃস্বপ্নের কারণ হন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনিয়ো৷ বেলজিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হ্যাজার্ডের কর্নার থেকে আসা বলটি তাঁর ডান কাঁধে লেগে ঢুকে যায় নিজের পোস্টেই৷ ১-০-তে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম৷
সেই গোল শোধ দিতে মরিয়া হয় ব্রাজিল৷ ১৫ মিনিটে এবার জটলা বেলজিয়ান শিবিরে৷ কিন্তু ঠিক সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি তারা৷ ২৬ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে মার্সেলোর জোরালো শট আটকে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক কোর্টোয়া৷
তবে এবার ভাগ্যের কাঁধে ভর দিয়ে নয়, ৩১ মিনিটে বেলজিয়ান তারকা লুকাকু’র ডানপাশে বাড়ানো বলটি টেনে নিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে চমৎকার শটে প্রতিপক্ষের জালে প্রবেশ করান দে ব্রয়নে৷ ২-০ এগিয়ে যায় বেলজিয়াম৷
৩৫ মিনিটে ব্যবধান কমাতে পারতেন গাব্রিয়েল জেসুস৷ কিন্তু মার্সেলোর ক্রসটি হেড দিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি৷ কুটিনিয়ো বারবার একক নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতে চাইছিলেন৷ ৩৭ মিনিটে তাঁর বাঁকানো শটটি ফিরিয়ে দেন কোর্টোয়া৷
৪১ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ডিবক্সের বাইরে ফ্রিকিক পায় বেলজিয়াম৷ দ্বিতীয় গোল করা দে ব্রয়নে এবার সফল হননি৷ দুই গোল হজম করা ব্রাজিলকে কিছুটা ছন্নছাড়া দেখাচ্ছিল৷ ২-০-তেই শেষ হয় প্রথমার্ধ৷
দ্বিতীয়ার্ধে উইঙ্গার উইলিয়ানকে বদলে ফিরমিনিয়োকে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে৷ এবার আরো মরিয়ো হয়ে খেলে ব্রাজিল৷ লেফট উইং দিয়ে মার্সেলোর নেতৃত্বে শুরুতেই দু’তিনটি আক্রমণের চেষ্টা করে৷ কিন্তু সফলতা পেতে প্রয়োজন আরো পরিষ্কার সুযোগ৷
এর মধ্যে নেইমার একাধিকবার পড়ে গেছেন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে৷ রেফারি বোধ হয় আগের অভিজ্ঞতা থেকে অতিশয় সতর্ক৷
৫৫ মিনিটে ডান দিক থেকে আক্রমণ করে ব্রাজিল৷ সেখানে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে এবার পড়ে যান গাব্রিয়েল জেসুস৷ ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে রেফারি এবারো ব্রাজিলের পেনাল্টির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন৷ জেসুসকে তুলে নেন তিতে৷ নামান ড্রিবলিং মাস্টার জুভ তারকা ডগলাস কস্তাকে৷
ব্যবধান কমাতে ব্রাজিল বারবার আক্রমণের সূচনা করে৷ কিন্তু কোনোভাবেই সফলতা মিলছিল না৷ অন্যদিকে, পাল্টা আক্রমণই হলো লুকাকু-চাডলি-ডে ব্রয়নেদের অস্ত্র৷ সেই অস্ত্র কাজে লাগিয়ে মাঝে মাঝেই বিপদের শঙ্কা তৈরি করছিলেন ব্রাজিলের রক্ষণভাগের জন্য৷
৭৬ মিনিটে আবারো নীল হলুদ আক্রমণ৷ নেইমারের শট ফিরিয়ে দেন কোর্টোয়া৷ কিন্তু তা চলে আসে কুটিনিয়ো’র কাছে৷ তিনি পাঠিয়ে দেন অগুস্টোর দিকে৷ হেড দিয়ে পথ পরিষ্কার করেন এই মিডফিল্ডার৷ গোল ব্যবধান কমে হয় ২-১৷
কয়েক মিনিটের মধ্যে আবারো আক্রমণ৷ এবার অগুস্টো লক্ষ্য থেকে কিছুটা দূরে৷ ৮৪ মিনিটে আবারো সুযোগ৷ নেইমারের ছোট্ট চিপইনকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন কুটিনিয়ো৷
দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে আক্রমণের ধার একেবারে কমিয়ে ফেলে বেলজিয়াম৷ গোল বাঁচানোই তাদের মিশন হয়ে দাঁড়ায়৷ অতিরিক্ত সময়ে ৯৩ মিনিটে ডগলাস কস্তার পাস থেকে বাঁকানো শট নেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার৷ কিন্তু লাফিয়ে তা পোস্টের ওপর দিয়ে বের করে দেন গোলরক্ষক কোর্টোয়া৷
পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ানো এই ম্যাচটি শেষতক বিদায় জানায় ব্রাজিলকেই৷
একইসঙ্গে ২০১৮ বিশ্বকাপ বিদায় জানায় সব ল্যাটিন দলগুলোকে৷ বেলজিয়াম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্সের৷