বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে চলেছে বাংলাদেশে
১৬ এপ্রিল ২০০৯ঢাকা সিটি কর্পোরশন একটি সমীক্ষায় জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে যত তালাকের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা তারাই পালন করছেন অগ্রণী ভূমিকা৷ সমীক্ষায় আরো জানানো হয়, প্রতি বছর ঢাকা শহরে তালাকের হার বাড়ছে শতকরা ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশে৷ ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন পাঁচ হাজারেরও বেশি তালাকের নোটিশ পেয়েছে, ২০০৪ সালে তার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার এবং ২০০৩ সালে তিন হাজারের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে অন্তত সাড়ে চার হাজার বিবাহ বিচ্ছেদ চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং মাত্র সাড়ে তিনশ নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে৷ যারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা এক ধরনের সমঝোতায় আসতে সক্ষম হয়েছেন৷
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন আরো জানায়, বাকি নোটিশ বা প্রজ্ঞাপনগুলোর বিষয়ে তারা কিছু করতে সক্ষম নয় কারণ তা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না৷
২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে কর্পোরেশন প্রায় দুই হাজার নোটিশ পায় তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হয়েছে, বিবাহ বিচ্ছেদ আটকানো সম্ভব হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে৷ কর্পোরেশনের কর্মকর্তা জানান, মাত্র দু মাস আগে বিয়ে হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই তালাকের জন্য নোটিশ দিয়েছে এমন ঘটনাও আমরা প্রত্যক্ষ করছি৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা শারমিন সুলতানা নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ তিনি জানান, বাংলাদেশের মেয়েরা ইদানিং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে বেশি৷ বিয়ে ভেঙ্গে দিতে বা স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করতে তাদের কেউ কেউ দ্বিধা বোধ করছে না৷ এ বিয়ে প্রয়োজন নেই – তাদের এটাই শেষ কথা৷
তিনি আরো জানান, সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে৷ বাংলাদেশের নারীরা আগের চেয়ে এখন অনেক স্বাধীন৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তাদের আছে৷ এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে স্বামীরা স্ত্রীর উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল৷ শিক্ষিত নারীরা এখন আর অসহায় নয়৷ তারা এখন অনেক সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে৷ তবে শুধুমাত্র এ কারণেই যে তালাক হচ্ছে তা কিন্তু নয়৷
যে বা যেসব মহিলারা স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন না তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টেছে৷ তাদেরকে আর বোঝা বলে মনে করা হচ্ছে না, হীন দৃষ্টিতে দেখাও হচ্ছে না৷
৩০ বছর বয়স্কা এক নারীর দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে৷ তিন বছর প্রেমের পর তিনি বিয়ে করেন৷ কয়েক মাস আগেই তিনি তার স্বামীকে তালাক দেন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন ছিল মূল কারণ৷ এছাড়া স্বামীর একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল৷ যখনই তিনি প্রতিবাদ করতেন তার ওপর নেমে আসতো অত্যাচার৷
প্রফেসর শারমিন সুলতানা জানান, আগে নারীরা যেভাবেই হোক বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতো৷ বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের অত্যাচারও তারা নীরবে সহ্য করতো৷
নারীরা ইদানিং অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের স্বাবলম্বী করছে, তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন৷ অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার কারণে তাদের ভিতর এক ধরনের গর্ব কাজ করে৷ যে কোন অধিকার আদায়ে, যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি সরব৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক