বিশ্বের কয়েকটি বিতর্কিত বই
ধর্ম, রাজনীতি, অশ্লীলতা ইত্যাদি নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ ছবিঘরে এমনই কয়েকটি বইয়ের কথা থাকছে৷
১৯৮৪
সেই ১৯৪৯ সালেই ব্রিটিশ লেখক জর্জ অরওয়েল লিখে গিয়েছিলেন ভবিষ্যতে এমন ‘বিগ ব্রাদার’রা পৃথিবী শাসন করবেন, যারা ‘থট পুলিশ’ বা চিন্তার পুলিশ দিয়ে মানুষের ইচ্ছা আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কেড়ে নেবেন৷ একই লেখকের রাশিয়ার স্টালিন যুগের ভয়াবহতাকে তুলে ধরা বই ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল৷
ইউলিসিস
১৯০৪ সালের ১৬ জুন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে লেওপোল্ড ব্লুমের কাটানো একটি দিন নিয়ে ইউলিসিস লিখেছেন জেমস জয়েস (ছবি)৷ বইটি প্রথম সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল৷ এরপর ১৯২২ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়৷ বইটির বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি ও যৌনতার অভিযোগ উঠেছিল৷ এমনকি সিরিজ আকারে প্রকাশের সময় অশ্লীলতার মামলাও হয়েছিল৷
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস
ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির এই বইটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়৷ বইটি লেখার সময় মহানবি (সাঃ) এর জীবন থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু বইটির বিভিন্ন অংশ অনেক মুসলমানের কাছে অবমাননাকর ঠেকেছে৷ ফলে বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি পেয়েছিলেন রুশদি৷ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি তাঁকে হত্যার ফতোয়াও দিয়েছিলেন৷ এছাড়া এই বই বিক্রি করায় বিভিন্ন দোকানে বোমা হামলাও হয়েছে৷
দ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি
মার্কিন ভারততত্ত্ববিদ উইন্ডি ডোনিগারের লেখা ‘দ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি’ বইটি (হাতে ধরা) ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়৷ এরপর ২০১৪ সালে ভারতে এটি নিয়ে বিতর্ক হয়৷ বইটিতে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা হয়েছে এবং ভুলভাবে হিন্দু ধর্মের ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ ফলে ভারতের বাজার থেকে বইটি তুলে নেয়া হয়েছিল৷ অবশ্য ২০ মাস পর আবারও ভারতের বাজারে ফিরে এসেছিল বইটি৷
দ্যা দা ভিঞ্চি কোড
মার্কিন লেখক ড্যান ব্রাউনের এই বই সারা বিশ্বের রোমান ক্যাথলিকদের সমালোচনা কুড়িয়েছিল৷ কারণ বইতে তিনি যিশু খ্রিস্ট আর ইহুদি নারী ম্যারি মাগডালেনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেছেন৷ ২০০৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল৷
অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস
ড্যান ব্রাউনের এই বইটি প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে৷ এটি একটি ধর্মীয় থ্রিলার৷ এতে প্রাচীন যুগের ‘ইলুমিনাটি’ নামের সিক্রেট সোসাইটির কথা যেমন আছে, তেমন ভ্যাটিকান ধ্বংস করে দেয়ার হুমকিও রয়েছে৷ ফলে এই বইয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত মুভিটি (ছবি) ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মের নেতা ও অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েছিল৷
লোলিতা
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্ম নেয়া ভ্লাদিমির নাবোকফের লেখা বইটি ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল৷ মাঝবয়সি এক সাহিত্যের অধ্যাপকের ১২ বছরের লোলিতাকে ভালো লাগা এবং তার প্রতি আবেশ তৈরি হওয়া নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে৷
সোফি-স চয়েস
মার্কিন লেখক উইলিয়াম স্টাইরন ১৯৭৯ সালে বইটি লিখেছিলেন৷ হলোকস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারীর কথা এতে তুলে ধরা হয়েছে৷ সোফি নামের সেই নারী নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে গিয়ে নাথানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান৷ এরপর স্টিঙ্গো নামের আরেকজন তাদের দুজনের বন্ধু হন৷ এক পর্যায়ে সোফি আর স্টিঙ্গোর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে৷ তবে লেখক স্টাইরন হলোকস্টের বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরেছেন তা বিতর্কিত হয়েছিল৷
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকলবেরি ফিন
শ্বেতাঙ্গ কিশোর হাকলবেরি ফিন ও তার কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু জিমের (যে একসময় দাস ছিল) দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে বইটি লিখেছেন মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন৷ ১৮৮৪ সালে যুক্তরাজ্যে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল৷ সেই সময় বইয়ে বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল৷ বিশেষ করে ‘নিগার’ শব্দটি বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছেন লেখক৷ যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের এই নামে ডাকা হতো৷
দ্য ক্যাচার ইন দ্যা রাই
মূল চরিত্র ১৭ বছরের হোল্ডেন কোলফিল্ডের অবাধ্যতা আর উদ্বেগ নিয়ে কাহিনি গড়ে উঠেছে৷ উপন্যাস হিসেবে ১৯৫১ সালে প্রকাশিত বইটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা হলেও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এটি৷ বিটলস তারকা জন লেননের হত্যাকারী মার্ক চ্যাপম্যান যেদিন লেননকে হত্যা করেন সেদিনই তিনি বইটি কিনেছিলেন৷ মার্কিন লেখক জে ডি সালিঞ্জার বইটি লিখেছেন৷
ট্রপিক অফ ক্যানসার
হেনরি মিলারের বইটি ১৯৩৪ সালে ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়েছিল৷ তবে সেই সময় বইটির বিরুদ্ধে মিসোজিনি অর্থাৎ নারীর প্রতি বিদ্বেষ, এবং যৌনতা বিষয়ক উপাদান বেশি থাকার অভিযোগ উঠেছিল৷ এরপর ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বইটি প্রকাশের সময়ও অশ্লীলতার অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয়৷ পরে অবশ্য সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন একটি আদালত৷
দ্য চকলেট ওয়ার
ক্যাথলিক স্কুলে জেরি নামে এক কিশোরের উপর চালানো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন নিয়ে বইটি লিখেছেন রবার্ট কর্মিয়ার৷ ফলে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বিতর্ক শুরু হয়েছিল৷