ম্যার্কেল তৃতীয়বার ক্ষমতায়
১৭ ডিসেম্বর ২০১৩২২ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রায় তিন মাস পর নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে৷ ম্যার্কেল তার নেতৃত্বে থাকবেন৷
ব্যক্তিগত জীবনে ম্যার্কেল কেমন?
ম্যার্কেলের বাবা ছিলেন একজন যাজক, অথচ তিনি এমন একটা সময় বেড়ে উঠেছেন যখন কমিউনিজমের যুগ চলছে৷ একদিকে রক্ষণশীল সমাজ অন্যদিকে সাম্যবাদ – এই দুইয়ের সমন্বয় ম্যার্কেলকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীতে পরিণত করেছে৷
১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গে জন্ম আঙ্গেলা কাজনারের৷ তাঁর জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর যাজক বাবা তাঁকে নিয়ে পূর্ব জার্মানিতে চলে যান৷
পদার্থ বিদ্যায় ডক্টরেট করার সময়ই সহপাঠী উলরিশ ম্যার্কেলকে বিয়ে করেন তিনি৷ কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদও হয়৷ ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল পতনের আগ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন ম্যার্কেল৷ ১৯৯০ সালে তিনি যোগ দেন তাঁর বর্তমান দল সিডিইউ'তে এবং সেবারই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷
তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন৷ পরে তিনি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান৷ ২০০০ সালে হঠাৎই দলের প্রধান নির্বাচিত হন ম্যার্কেল৷ সেসময় তিনি ‘স্লাশ ফাণ্ড স্ক্যান্ডাল'এর কারণে কোলকে দলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে যেতে বলার সাহস দেখিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷
২০০৫ সালে সাত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এসপিডি'র চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো জার্মানির নারী চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি৷ কেবল প্রথম নারীই নন, তিনি সর্বকনিষ্ঠ চ্যান্সেলর৷ ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচারের পর ইউরোপের অন্যতম ক্ষমতাধর নারীও ম্যার্কেল৷ প্রথমবার দায়িত্ব নিয়েই ম্যার্কেল রক্ষণশীল এবং তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী এসপিডি'র সাথে গ্র্যান্ড কোয়ালিশন বা মহাজোট গঠন করেন৷ তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেও তাঁকে সেই জোটই গঠন করতে হলো৷
গত ১০ বছরের মধ্যে ৮ বার ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লেখ করেছে৷
তবে ব্যক্তিগত দিক থেকে অন্য আট-দশটা মানুষের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি৷ জার্মান অপেরার ভীষণ অনুরাগী ম্যার্কেল ফরাসি রেড ওয়াইনের ভক্ত৷ অবসর যাপনের জন্য তাঁর পছন্দের স্থান ইটালির পাহাড়ি এলাকা৷ আত্মনিয়ন্ত্রণ হচ্ছে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ এবং নিজেকে একজন গৃহিণী হিসেবেও পরিচয় দিতে পছন্দ করেন তিনি৷
সাধারণদের মতোই বক্সি ট্রাউজার তাঁর পছন্দ, বিশ্রাম নিতে ম্যার্কেল ছুটে যান উত্তর বার্লিনে নিজের কান্ট্রি হাউজে৷ সেসময় যেসব সুপারমার্কেটে ছাড় দেয়া হয়, সেসব দোকানে ঢুঁ মারেন তিনি৷
১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ম্যার্কেল৷ রসায়নবিদ স্বামী ইওয়াখিম জাওয়ার জনসমক্ষে খুব একটা আসেন না৷ তাঁকে ডাকা হয় ‘দ্য ফ্যান্টম অব দ্য অপেরা' নামে৷ ম্যার্কেলের কোনো সন্তান নেই৷
পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান
ক্ষমতা গ্রহণের পর ম্যার্কেল দেখেছেন বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা৷ তার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছিলেন ম্যার্কেল৷ এজন্য ক্ষমতার আট বছর পরেও তাঁর উপর মানুষের আস্থা আগের মতোই রয়েছে৷ একারণেই এবারও বিপুল জনসমর্থন পেয়েছেন তিনি৷
সমালোচকরা বরাবরই বলেন, স্বল্পভাষী ম্যার্কেল কোনো প্রতিশ্রুতি এবং দ্বিমত ছাড়াই সব পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷
স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক বললেন, তাঁর কাছ থেকে কখনোই কেউ কোনো হুমকি আশা করতে পারে না৷ কোনো কঠিন যুক্তি নিজের বা বিরোধীদের পক্ষে করতে কখনো শোনা যায়নি৷ তাঁর সাথে খোলাখুলি কথা বলা যায় এবং চিন্তাভাবনা সম্পর্কে পূর্বানুমান করা যায়৷
তবে জার্মানির বাইরে এথেন্স, লিসবন বা মাদ্রিদে তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে৷ সেখানকার অধিবাসীরা মনে করেন পুরো ইউরোপে বাজেট ঘাটতি এবং বেকারত্বের জন্য ম্যার্কেলই দায়ী৷
এপিবি/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ)