বিশ্বে ক্যামেরার সবচেয়ে বড় মেলা ‘ফোটোকিনা’
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন পরিবারের ছবি তোলার জন্য স্টুডিওতে যেতে হতো৷ সেখানে দেয়ালে সাঁটা থাকতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কিছু ছবি৷ তার সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতেন সবাই৷ কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে৷ তবে এখনো স্টুডিওতে যেতে হয়৷ কিন্তু ছবি তোলার জন্য নয়৷ বরং ছবির প্রিন্ট আউট নেওয়ার জন্য৷ এই পরিবর্তনের কারণ ডিজিটাল ক্যামেরা৷ এই ক্যামেরা আরও একটি সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের৷ আগে একটি ফিল্ম দিয়ে ৩৬টির বেশি ছবি তোলা যেত না৷ তাই ছবি তোলার সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো কখন ফিল্ম শেষ হয়ে যায় ৷
কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরা আসায় সেই সমস্যাটাও মিটে গেছে৷ এখন মানুষ যত খুশি ছবি তুলতে পারে৷এক হিসেবে দেখা গেছে, বর্তমানে জার্মানিতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক হাজার ছবি তোলা হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঞ্চাশের দশক থেকে এই সংখ্যা প্রায় ১০ গুন বেশি!
এতক্ষণ স্টিল ফটো বা স্থির ছবির কথা বলছিলাম৷ এবার আসি ভিডিও'র কথায়৷ আগে ভিডিও ক্যামেরা মানেই ছিল বিশাল কিছু৷ আর সেটা চালানো তো ছিল আরেক ব্যাপার৷ দক্ষ হতে হতো৷ কিন্তু এখন আর সেটা নেই৷ এখন প্রায় সবাই ভিডিও করতে পারেন৷ এসবই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে৷ ফলে স্টিল বা ভিডিও যে কোনো ক্যামেরার আকার যেমন ছোট হয়ে এসেছে, তেমনি সহজ হয়েছে সেগুলোর ব্যবহার৷
এসব কারণে এখন বেড়ে গেছে ক্যামেরার কদর৷ ফোটোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশনের কনস্টান্স ক্লাউস বলছেন, প্রযুক্তিগত পণ্য কেনার মধ্যে ক্যামেরার অবস্থান এখন পাঁচে৷ এই তালিকায় প্রথমে রয়েছে ফ্রিজ৷ তারপর টেলিভিশন, টেলিফোন আর মোবাইল সেট৷ এরপরেই ক্যামেরার স্থান৷ এই ক্যামেরা নিয়েই জার্মানির কোলনে হয়ে গেল একটি মেলা, যার নাম ‘ফোটোকিনা'৷ সর্বাধুনিক সব ক্যামেরা ও ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাপাতির পসরা বসেছিল সেখানে৷
মেলায় এসেছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ছেলে কুমার দাশগুপ্ত৷ তবে ৩৫ বছর ধরে তিনি বাস করছেন দুবাইতে৷ সেখানে তাঁর একটি স্টুডিও রয়েছে; যেখানে টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান তৈরি কিংবা কোম্পানির জন্য বিজ্ঞাপন বানানো হয়৷ এসব কাজে তাঁর প্রয়োজন হয় অত্যাধুনিক ক্যামেরা, এডিটিং প্যানেল আর মিক্সিং সফটওয়্যার সহ নানান যন্ত্রপাতির৷ এসবের খোঁজে তিনি ঘুরে বেড়ান বিশ্বের বিভিন্ন মেলায়৷ এখন তিনি ফোটোকিনায়৷ বললেন, এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলা৷ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম কী আছে এই মেলায়৷ বললেন, ‘‘ক্যামেরাতো ছিলই৷ সঙ্গে ছিল বিভিন্ন ধরণের লেন্স, ব্রডকাষ্টিং যন্ত্রপাতি, এডিটিং ও মিক্সিং সফটওয়্যার, লাইটিং-এর যন্ত্রপাতি, থ্রিডি ক্যামেরা ইত্যাদি৷''
কুমার দাশগুপ্ত যেমনটা বললেন এবারের মেলায় ছিল থ্রিডি ক্যামেরা৷ থ্রিডি বা থ্রি ডাইমেনশনাল বিষয়টা এখন বেশ আলোচিত৷ বিশেষ করে জেমস ক্যামেরনের ‘আভাতার' ছবি মুক্তির পর থ্রিডি নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশ বেড়ে গেছে৷ তাই মেলায় দর্শকদের মূল আকর্ষণ অবশ্যই ছিল থ্রিডি ক্যামেরার প্রতি৷
এবার ফোটোকিনার ইতিহাসের পাতা থেকে একটা চক্বর খেয়ে নেওয়া যাক৷ মেলার শুরু ১৯৫০ সালে৷ এরপর থেকে প্রতি দুই বছর পর পর সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মস্তমাপের মেলা৷ এই মেলার গুরুত্ব বুঝতে পেরে ১৯৫৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি আইসেনহাওয়ার একটি শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন৷
বিশ্বের নামিদামি সব ক্যামেরার ব্র্যান্ড এসেছিল এবারের মেলায়৷ এসেছিলেন বিশ্বের নামকরা সব ফোটোগ্রাফাররাও৷ এঁদেরই একজন মাইক লারসন৷ বিয়ের ছবি তোলার জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি তাঁর৷ লারসেন এসেছেন জেনে অনেক নবদম্পতিই মেলায় হাজির হয়েছিলেন বিয়ের সাজে৷ লারসনের কাছে ছবি তুলতে৷ এছাড়া ছিলেন স্টিভ থর্টন৷ বিখ্যাত ফ্যাশন ফোটোগ্রাফার৷ মেলায় আসা দর্শকদের মধ্য থেকে তিনি নিজেই খুঁজে নিয়েছিলেন তাঁর ছবির বিষয়, অর্থাৎ ছবি তুলেছেন তাঁর পছন্দ করা দর্শকদের৷ আর হঠাৎ করে পাওয়া এই সুযোগ অনেকের জন্যই ছিল বেশ অবাক করা একটি ব্যাপার৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়