মধ্যবিত্তদের সংখ্যা
২৮ জুন ২০১৩ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে৷ ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশে তাদের কাছে পাখির চোখ হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোট ব্যাংক৷ কেন্দ্রে সরকার গড়তে এবং ফেলতে এই মধ্যবিত্তদের শক্তি অসীম৷ ২০৩০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে মধ্যবিত্তদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০০ কোটি৷ তার মধ্যে ভারতে মোটামুটি ৪০ থেকে ৫০ কোটি৷ বর্তমানে চীনে মধ্যবিত্তরা জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ, ভুটানে ৫০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ৷
কাদের বলা হবে মধ্যবিত্ত? এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যাঁরা দৈনিক ২ থেকে ২০ মার্কিন ডলার খরচ করেন তাঁরা পড়েন উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে৷ প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা দৈনিক দুই ডলার খরচ করেন, তাঁদের কি প্রকৃতপক্ষে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে ফেলা যায়? ২০১১ সালের আদমসুমারিতে পাওয়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যাঁদের বাড়িতে টিভি, কম্পিউটার/ল্যাপটপ, স্কুটার/গাড়ি, ফোন/মোবাইল ফোন আছে – তাঁরাই মধ্যবিত্ত পদবাচ্য৷
১৯৯১ সালে আর্থিক সংস্কার ভারতের ইতিহাসে এক মাইলফলক৷ সেসময় খুলে দেয়া হয় বিদেশির জন্য ভারতের দরজা৷ এর দুটি দিক৷ একদিকে বিদেশি লগ্নিকারীদের জন্য মধ্যবিত্তদের বাজার, অন্যদিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার সম্ভাবনা৷ মধ্যবিত্তদের আয় বাড়লে তাঁরা খরচ বেশি করবেন৷ খরচ বেশি করলে চাহিদা বাড়বে৷ চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়বে৷ উৎপাদন বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে৷ আর চক্রবৃদ্ধি হারে তার প্রভাবে আয় বাড়বে গরিবদেরও৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন৷
পাশাপাশি এর চ্যালেঞ্জও বড় কম নয়৷ একবিংশ শতাব্দীতে ভারতে খাদ্য ও এনার্জি নিরাপত্তার মোকাবিলা করতে হবে৷ মুদ্রাস্ফীতি ক্রমবর্ধমান৷ গত দু'বছরে আর্থিক সংকটে মার খাচ্ছেন বেশি মধ্যবিত্তরা৷ দৈনন্দিন সংসার খরচ বাড়ছে, জমিজমা, ঘরবাড়ির দাম হচ্ছে আকাশছোঁয়া৷ তবু মধ্যবিত্তরা আশা ছাড়েননি৷
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মধ্যবিত্তরা ভোগেন চাকরির মানসিকতায়৷ তাঁরা চাকরি চান, কিন্ত অন্যকে চাকরি দিতে পারেন না৷ কারণ, তাঁদের মধ্যে উদ্যোগী তৎপরতা কম৷ ঝুঁকি নেবার সাহস কম৷ কোম্পানি গঠন করাও তাঁদের নাগালের বাইরে৷
ভারতীয় সমাজে জাতিভেদ প্রকট৷ জাতপাত অনুযায়ী হয় কাজের বিন্যাস৷ যদিও এখন জাতিভেদ অনেকটা কম৷ বর্তমানে কিছু কিনতে বা বিক্রি করতে গেলে কেউ জিজ্ঞাসা করে না, তোমার জাত কী?