বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে
৭ জানুয়ারি ২০১০তারা বলেছেন, তাদের এই কর্মকান্ড জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশের মতো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আরো দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দেবে ৷
যেখান থেকে শুরু
জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের কার্যকর অর্থে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে জাপানের পুরোনো শহর কিয়োটোতে৷ সেই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে রাজি হয়েছিল৷ এর পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে প্রণয়ন করা হয় বালি অ্যাকশন প্ল্যান৷ সেখানে বলা হয়েছিল কোপেনহেগেন বৈঠকে ঠিক করা হবে কিয়োটো পরবর্তী পৃথিবীর তাপ কমানোর পরিমাণ সম্পর্কে৷কোপ-১৫ নামের এই সম্মেলনের নতুন কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি না হওয়ায় সম্মেলনকে অনেকেই ব্যর্থ বলেই চিহ্নিত করছেন৷ বালি সম্মেলনের পরও কোপেনহেগেন সম্মেলনের আরও কয়েকটি সভার আয়োজন করে ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ৷ পোল্যান্ডের পোজনেন, জার্মানির বন, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরে অনুষ্ঠিত এই সভাগুলোতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন৷ কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, তার রূপকল্প নিয়ে আলোচনা হয় এ সভাগুলোতে৷
যা বলেছে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেল
২০০৯-এর শেষে এসে জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ কার্বন ঘনীভবনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা বলছেন, এই হারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে এই শতাব্দী শেষে মোট তাপমাত্রা বাড়বে ৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
২০০৭ সালেই জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেল প্রকাশ করে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদন৷ প্রতিবেদনে বিশ্বের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, যে হারে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ বিশ্বের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো৷ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়বে৷ আর এই অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বিশ্ব৷
এলডিসির দাবি কি উপেক্ষিত থাকবে?
বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জোট এলডিসি, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট কোপেনহেগেনেই কিয়োটো প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী, এই শতাব্দী শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা কার্বন ঘনীভবনের পরিমাণ ৩৫০ পিপিএমে সীমাবদ্ধ রাখা ও অভিযোজন তহবিলে জলবায়ু-ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি তুলেছিল৷ কিন্তু কোন কিছুই যেন শক্তভাবে হলো না৷ কোপেনহেগেনে গ্রহণ করা অঙ্গীকার নানা অসঙ্গতি এবং ফাকা বুলি থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এই অঙ্গীকারকে স্বীকৃতি দেয়৷
ঐকমত্যের বিষয়গুলো
যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো হলো ধনী ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রাখা হবে৷ ২০১০-১২ সালের জন্য দরিদ্রতর দেশগুলোর জলবায়ু তহবিলে ২৫-৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হবে৷ ২০২০ সাল নাগাদ অঙ্ক ১০০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে৷ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের লাগাম টেনে ধরতে দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও ইচ্ছা পূরণের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে একটি কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হয়েছে৷
যে সকল বিষয়ে একমত নন তারা
আর যে সব বিষযে একমত হওয়া যায়নি সেগুলো হলো, অর্থের পরিমাণ যা দিয়ে উন্নত দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাবে; নিঃসরণ কমাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো কতটা কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করবে; প্রত্যেক দেশের নিঃসরণ কমানো পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের প্রক্রিয়া কী হবে? নিঃসরণের হার কমাতে দেশগুলো বাধ্য থাকবে কি-না; নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থ দেবে; অর্থ দেওয়ার উপায় কী হবে আর এই অর্থ কীভাবে জোগাড় করা হবে; কিয়োটো প্রটোকলের ভবিষ্যৎ কী হবে? এটি কি কোপেনহেগেন চুক্তির অংশ হবে, নাকি এই চুক্তি কিয়োটোর জায়গা দখল করবে; শিল্পপূর্ব অবস্থা থেকে সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়লে তাকে সবচেয়ে বেশি বলে গণ্য করা হবে৷ কীভাবে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য প্রস্তুত হবে৷ কী ধরনের অভিযোজন দরকার হবে৷ এর মধ্যে আছে, সমুদ্র নিরাপত্তা, সুপেয় পানির সরবরাহ ও নতুন খাদ্যশস্য উৎপাদন৷
দৃষ্টি এখন মেক্সিকোর দিকে
উন্নয়নশীল দেশগুলো চায় খাপ খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ও যথাযথ সাহায্য৷ তাদের যুক্তি হলো, সমস্যা তৈরি করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলো৷ ফলে এর জন্য টাকা তাদেরকেই দিতে হবে৷ বন রক্ষার উদ্যোগও এই চুক্তির উপাদান হবে৷ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠেয় কোপ-১৬ সম্মেলনে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি করার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন বিশ্বনেতারা৷ ২০১০ সালে সবার দৃষ্টি তাই মেক্সিকোর দিকে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই