1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ, ভেড়ি, পুকুর ভেসে  ক্ষতি

২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

গত তিন-চার দিন ধরে সমানে বৃষ্টির ফলে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ছয়টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

https://p.dw.com/p/40dxl
প্রতীকী ছবি।ছবি: Getty Images/AFP/Str

জলের তলায় চলে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেসে গেছে পুকুর, মাছের ভেড়ি। মাঠে ধানের উপর দিয়ে বইছে জল। অতিবৃষ্টির দাপটে পশ্চিমবঙ্গে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। করোনার ফলে একেই অর্থনীতি প্রবল চাপে। তার উপর প্রবল বৃষ্টি পথে বসিয়ে দিয়েছে লাখো মানুষকে। উৎসবের মৌসুমের আগে এই দুর্যোগে মানুষ বিপর্যস্ত।

গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কলকাতা ভেসেছে। সেই সঙ্গে ভেসেছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর।

মেদিনীপুরে কেলেঘাই, কপালেশ্বরী, কাঁসাই, চণ্ডীয়া, রূপনারায়ণ ফুঁসছে। কেলেঘাইয়ের জলে ভগবানপুরের অনেক এলাকা ডুবে গেছে। তালছিটকিনিতে বাঁধ ভেঙেছে। ময়না, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, তমলুক শহরে জল রয়েছে। পূ্ব মেদিনীপুরের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বাসিন্দা রাজু চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, তাদের গ্রামে ৭৮-এর পর কখনো বন্যা হয়নি। কিন্তু এবার বৃষ্টির পর গ্রাম জলে ভেসেছে। পুকুরের জল উপচে গেছে। রান্নাঘরে জল। তাদের নিজেদের গোটা আটেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার সঙ্গে চলছে প্রবল লোডশেডিং।

জেলায় প্রায় তিনশর কাছাকছি ত্রাণশিবিরে ৩৫ হাজার মানুষকে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পাউচের জল ও খাবার পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ত্রাণ আসেনি। দুর্গতদের উদ্ধারও করা হয়নি। তারা নিজেরাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচুর ধানের জমি জলের তলায় চলে গেছে। পুকুর ও মাছের ভেড়ি থেকে মাছ ভেসে গেছে। বসিরহাটের কাছে স্বরূপনগরে থাকেন শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিক। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি থেমেছে। তাই গ্রাম-গঞ্জ থেকে জল নেমেছে। কিন্তু ধানের জমি যেহেতু নীচু এলাকায় হয়, তাই সেগুলি এখনো জলের তলায়।'' দেবাশিস জানিয়েছেন, ''মানুষ এখনো আতঙ্কে। কারণ, আগামী শনি ও রোববার আবার প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। সেটা হলে আবার জলে ভাসবে বিস্তীর্ণ এলাকা।''

হাওড়ায় রামপুর খাল উপচে জল ভিতরে ঢুকেছে। মুম্বই রোডও একফুট জলের তলায় চলে গিয়েছিল। হুগলিতে আগের তুলনায় জল কমলেও খানাকুলের মতো কিছু এলাকা এখনো জলের তলায়।

কেন এই অবস্থা?

একটু বেশি বৃষ্টি হলে কেন এরকম হবে? রাজু চক্রবর্তীর বক্তব্য, ''কেলেঘাই-কপালেশ্বরী ড্রেনেজ প্রকল্প অসমাপ্ত অবস্থায় আছে।  প্রবল বৃষ্টি হলে জল বেরোচ্ছে না। পুরোটাই জমে যাচ্ছে। নিকাশী ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে।'' রাজুর মতে, ''মানুষ এখন প্রচুর মাছের ভেড়ি করছেন। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। ফলে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা থেকে জল বেরোবার জায়গা থাকছে না।'' 

কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, দাবি-পাল্টা দাবি চলেছে। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকর দাবি করেছে, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়নি। অর্থবরাদ্দ করা হয়নি।  অথচ, এই নদীগুলিতে পলি জমে জমে গভীরতা একেবারেই কমে গেছে। পলি না তুললে বর্ষাতে নদী ফুঁসবে, লোকালয় ভাসাবে।

ঘাটাল মস্টার প্ল্যানেরও একই অবস্থা। বছরের পর বছর শুধু আলোচনা হয়, ডিপিআর তৈরি হয়। কাজ এগোয় না। এই মাস্টার প্ল্যানে নদী ও খাল সংস্কারের কথা আছে।

জল বেরোতে না পারলে, বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখা পরিকল্পনা রূপায়ণ না করলে, এরকমই পরিস্থিতি থাকবে বলে মনে করেন রাজু।

পরিস্থিতি খারাপ

গ্রামের দিকে অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। সাপের উপদ্রব বেড়েছে। জলে ডুবে আছে এলাকা। আরো বৃষ্টি হলে আরো এলাকা ডুববে। জল সরতে দেরি হবে। চাষের ধান নষ্ট, ভেরির মাছ নষ্ট। গবাদি পশু সামলাতে হিমশিম অবস্থা। তার উপর প্রবল বাজ পড়ছে। মানুষ মারা যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে বানভাসি পশ্চিমবঙ্গে লাখ লাখ মানুষ খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন।

জিএইচ/কেএম(পিটিআই, আনন্দবাজার)