বেছে নাও বই, ফেরত দাও পড়া হলে
১৪ অক্টোবর ২০১১এই প্রশ্নের একটি সহজ সমাধান পাওয়া গেছে জার্মানিতে৷ বিভিন্ন শহরের অলিতে-গলিতে, এমনকি ছেট-বড় সুপার-মার্কেটেও চালু করা হয়েছে সাধারণের জন্য ‘পাবলিক বুক-শেল্ফ'৷ একদম বিনে-পয়সায়৷
এ এক অভিনব পন্থা৷ কোলন শহরেই রয়েছে এমনই ‘বুক-শেল্ফ'৷ সেখানে শুধু বই বই আর বই৷ একেবারে বইয়ের ছড়াছড়ি৷ ছোটদের বই৷ বড়দের বই৷ মজার মজার কতো বই৷ ভাবলে ঠিক ছোটবেলার সেই পাড়ার লাইব্রেরির কথা মনে পড়ে যায়৷ মনে পড়ে, অতীতে বাংলাদেশেও শহরাঞ্চলের পাড়ায়-মহল্লায়, এমনকি গ্রামগুলোতেও শিক্ষিত মানুষরা মিলে বই সংগ্রহ করতেন৷ গড়ে তুলতেন লাইব্রেরি৷ যেখান থেকে স্বল্পশিক্ষিত গৃহবধূ, মা-বোনেরাও বই পড়ার একটা সুযোগ পেতেন৷
সবার জন্য ‘বুক-শেল্ফ'৷ এক-একটা ‘বুক-শেল্ফ'-এ রাখা প্রায় ২০০টির মতো বই৷ যা ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দেখা যায়, উল্টে-পাল্টে যখন-তখন পড়া ফেলা যায় বইগুলি৷ প্রয়োজনে একটা নয়, একাধিক বই নিয়ে যাওয়া যায় বাড়িতে৷ ঐ সব বই পড়ে ফেলার পর, ফেরত দেওয়া যায়৷ বই কেনার কোনোরকম ঝক্কি ছাড়াই৷ বই দানও করা যায়৷ যারা লাইব্রেরিতে যেতে নারাজ তাদের জন্য এধরনের ‘বুক-শেল্ফ' খুবই কাজে আসছে৷
কোলনে এ ধরণের সবচেয়ে বড় ‘বুক-শেল্ফ'-টি শহরের ‘বায়েনটুর্ম' এলাকায় অবস্থিত৷ ঐ যে যেখানে মধ্যযুগীয় প্রাচীর রয়েছে, ঠিক সেই খানে৷ এই ‘বুক-শেল্ফ'-টির পিছনে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি, সেই মিশায়েল আউবারমান জানান, ‘‘এটা শহরের মধ্যে চতুর্থ ‘বুক-শেল্ফ'৷ এছাড়া, অন্যতম আসবাব-চেইন ‘ইকিয়া'-র অদূরেও রয়েছে আমাদের আরো দু-দুটি ‘পাবলিক বুক-শেল্ফ'৷''
প্রসঙ্গত, একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ৪৪ বছর বয়স্ক মিশায়েল আউবারমানই কোলন শহরে প্রথম শুরু করেন এহেন লাইব্রেরির চল৷ গঠন করেন একটি গ্রুপ৷ যার নাম ‘কোলন সিটিজন্স ফাউন্ডেশন'৷ আউবারমান জানান, বর্তমানে প্রায় ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী শহরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত এই ‘বুক-শেল্ফ'-গুলির দেখাশোনা করছে৷ তিনি জানান, সাধারণত স্থানীয় বাসিন্দারাই এর খরচ জুগিয়ে থাকে৷ তাই লাভ-লোকসানের কোনো ঝামেলাই নেই এতে৷
তবে শুধু কোলন শহরেই নয়, এরকম ‘বুক-শেল্ফ' ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে রাজধানী বার্লিনসহ হ্যানোফার এবং আমাদের এই বন শহরেও৷ জার্মানির অন্যতম অনলাইন বইয়ের দোকান ‘বুখ.ডেএ'-এর মুখপাত্র বেটিনা আল্টহাউস-এর কথায়, ‘‘এহেন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে৷''
ইচ্ছে করলেই যে-কেউ, যে-কোনো সময় পড়তে পারে বইগুলো, করতে পারে জ্ঞান-আহরণ৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক