বেশি ‘ব্লু ফিল্ম’ দেখার ফল
৭ জুন ২০১৪গবেষণাটি চালান বার্লিনের ‘মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট'-এর বিজ্ঞানীরা৷ তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘জামা সাইকিয়্যাট্রি' জার্নালে৷ গবেষণার মোদ্দা কথাটি হলো, যে সব পুরুষ বেশি পরিমাণে পর্নোগ্রাফি দেখেন, তাঁদের মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম' ক্রমেই ছোট হয়ে আসে৷
মস্তিষ্কের ‘পুরস্কার প্রদান প্রণালী' বলতে বোঝায় সেই স্নায়ুগত কাঠামো, যা আনন্দের অনুভূতি এনে দিয়ে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে৷ গবেষকরা ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সের ৬৪ জন পুরুষের ব্রেন স্ক্যান করেন একটি এমআরআই মেশিন দিয়ে৷ দেখা যায়, যে সব পুরুষ বেশি পর্নো দেখেন, তাঁদের ‘স্ট্রায়াটাম' (মস্তিষ্কের একটি অংশ) অপেক্ষাকৃত ছোট৷ সেই সঙ্গে বলা দরকার, এই স্ট্রায়াটাম হল ‘পুরস্কার প্রণালী'-র একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা যৌন উত্তেজনার অনুভূতিতেও সংশ্লিষ্ট৷
পর্নো দেখে অভ্যস্থ পুরুষদের এমআরআই মেশিনে রেখে তাঁদের পর্নো দেখিয়ে লক্ষ্য করা গেছে যে, তাঁদের পুরস্কার প্রণালী ততটা সক্রিয় নয়৷ অর্থাৎ তাঁদের সমপরিমাণ সুখের অনুভূতি পেতে বর্ধিত পরিমাণ উত্তেজক লাগে৷ কিন্তু স্ট্রায়াটাম ছোট হওয়ার অর্থ কি এই যে, এই সব পুরুষদের যৌন উত্তেজনা বোধ করতে বাইরে থেকে বেশি স্টিমিউলেশন, অর্থাৎ পর্নোর প্রয়োজন পড়ে? নাকি এর অর্থ: বেশি পর্নো দেখার ফলেই তাঁদের স্ট্রায়াটাম ছোট হয়ে এসেছে?
গবেষকরা বলছেন – একে কার্য-কারণ বলা যেতে পারে, আবার ডিম আগে না মুর্গি আগে, তা-ও বলা যেতে পারে – মোট কথা, গবেষকরা বলছেন, তাঁদের পক্ষে সঠিক করে বলা সম্ভব নয়৷ তবে দ্বিতীয়টা সত্যি হবার সম্ভাবনাই বেশি: অর্থাৎ বেশি পর্নো দেখার ফলে স্ট্রায়াটাম ছোট হয়ে আসে৷ চলতি বৈজ্ঞানিক মনোভাব – নাকি পর্যবেক্ষণ? – হলো এই যে, যাঁরা পর্নো দেখেন, তাঁরা ক্রমেই আরো বেশি উত্তেজনাকর পদার্থ দেখতে চাইবেন৷
দৃশ্যত মাদক আসক্তিতেও স্ট্রায়াটামের একটা ভূমিকা আছে, তবে সেটা গবেষকরা যা ভেবেছিলেন, তার ঠিক উল্টো৷ দেখা যায়, কোকেইন সেবকদের স্ট্রায়াটাম সাধরণ মানুষদের চেয়ে দশ শতাংশ বেশি৷ ওদিকে যে সব টিনেজাররা সব সময় কম্পিউটার গেমস খেলছে, তাদেরও স্ট্রায়াটামের আয়তন বাড়ে৷ দৃশ্যত শুধুমাত্র পর্নো-আসক্তদের ক্ষেত্রেই স্ট্রায়াটামের আয়তন কমে৷
এ যুগে ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের ৫০ শতাংশই হলো যৌন বিষয়ক৷ কাজেই সেই পন্থায় পর্নোগ্রাফিতে ‘আসক্ত' হয়ে পড়া সম্ভব কিনা, সেটা একটা বৈধ ও বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন৷ সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের পথে আরো এক পা এগিয়েছেন মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা৷