ব্যবসা বন্ধ, তাও দায়িত্ব নিয়েছেন ওরা
১৩ এপ্রিল ২০২০বাংলা বছরের শেষ দিনে, কলকাতার ফুটপাথ দিয়ে স্রেফ হাঁটা যায় না৷ দুপাশে হকারদের স্টল উপচে পড়ে পশরায়৷ তাতে সংসারের দরকারি জিনিস থেকে বাহারি পোশাক, সাজগোজের সরঞ্জাম থেকে ঘরের চাদর, পর্দা, পাপোষ—সব পাওয়া যায়৷ লোকে এই সময় কেনেও দুহাত ভরে৷ নতুন বছরের শুরুটা নতুনভাবে করতে সবারই ইচ্ছে হয়৷ ফলে হকারদের সারা বছরের রোজগারের অনেকটা উঠে আসে এই চৈত্র মাসের বেচাকেনা থেকে৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে এবার চৈত্র মাস শুরু হওয়ার ঠিক আগে থেকেই শুরু হয়েছে লকডাউন৷ যার আন্দাজ হকারদের আগে থেকে ছিল না৷ ফলে প্রত্যেকেই নিজের সামর্থ অনুযায়ী বেশি করে মাল তুলেছিলেন, যা এখন অবিক্রিত পড়ে আছে গুদামঘরে৷ টানা এক মাস ধরে জারি থাকা লকডাউন যত এগিয়েছে, কড়াকড়ি আরও বেড়েছে৷ ফলে দোকান খোলার কথা ভাবতেও পারেননি হকাররা৷ ব্যবসা বন্ধ, টাকা আটকে আছে, পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার কোনও লক্ষণও নেই৷ ফলে হকারদের মাথায় হাত৷
‘‘করোনা আসলে শ্রমজীবী মানুষের বেশি ক্ষতি করে গেল!’’ বললেন হকার সংগ্রাম কমিটির নেতা মুরাদ হোসেন৷ কেবল হকাররা নয়, তিনি চিন্তিত দিনমজুরদের নিয়ে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে, যারা বাড়ি বাড়ি কাজ করে বেড়ান, সেই পরিচারিকাদের নিয়েও৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রের এই শ্রমজীবী মানুষদের প্রত্যেককে নিয়েই এখন হকার সংগ্রাম কমিটি চিন্তিত৷ তার সবথেকে বড় কারণ, এই মানুষগুলোই হাতে টাকা এলে ফুটপাথের হকারদের কাছে আসেন জিনিস কিনতে৷ তাদের আর্থিক ক্ষতি মানে ভবিষ্যতে হকারদেরও ব্যবসা নষ্ট৷ যার জন্য, এবারের নষ্ট চৈত্র সেলের থেকেও মুরাদ হোসেনরা বেশি চিন্তিত ভবিষ্যৎ নিয়ে৷
তবে এই বিপর্যস্ত আবহেও ওই মানুষগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে হকার সংগ্রাম কমিটি৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রায় ২০০ লোককে তারা প্রতিদিন পৌঁছে দিচ্ছেন চাল, ডাল তেল, আলু, সাবান৷ ‘‘আপাতত এইটুকুই আমরা করতে পারছি৷ জানি না, ভবিষ্যতে কী করা যাবে না যাবে,’’ চিন্তিত গলায় বললেন মুরাদ হোসেন৷