1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্রিটেনের টাকা ফিরিয়ে দিল বাংলাদেশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ নভেম্বর ২০১৬

কোনো কঠিন শর্তে বিদেশি সহায়তা নেবে না বাংলাদেশ৷ তাই দেশটিকে দেওয়া জলবায়ু তহবিলের ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড ফেরত পাবে ব্রিটেন৷ বস্তুত বিশ্বব্যাংকের দেওয়া কঠিন শর্ত নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এ অর্থ ব্যবহার করছে না বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/2SYYx
Sundarbans Bangladesch Indien UNESCO Welterbe
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে গঠিত ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিয়েলেন্স ফান্ড' (বিসিসিআর)-এর আওতায় যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ডিএফআইডি এ অর্থ বরাদ্দ রেখেছিল৷ সে সময় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ পাউন্ড অনুদানের ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার৷ সেই অর্থ থেকে বাংলাদেশ ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড অর্থ গ্রহণ করলেও, অর্থ সরবরাহের মাধ্যম হিসেবে বিশ্বব্যাংকের অন্তর্ভূক্তি মেনে নেয়নি৷ এ কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করেনি দেশটি৷ তাছাড়া এরপর শর্ত নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ডিএফআইডি তাদের ছাড় করা ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড অর্থ ফেরত নিচ্ছে৷

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবস্য এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷ বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক শাখার প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব কাজী সফিকুল আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ তবে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন৷

ড. নাজনীন আহমেদ

তবে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মুখপাত্র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্ক তিক্ততায় রূপ নেয় পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক যখন ৭৬৪ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ ফিরিয়ে নেয়, তখন থেকে৷ এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে কোনো অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কঠোর হয়েছেন৷ এটা স্পষ্ট করেছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শর্ত আরোপ করা কোনো দান গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন তিনি৷''

এই অর্থ ফেরত নেওয়াকে ব্রিটিশ সরকারের ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা বলছেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দক্ষতা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে ব্রিটিশ সরকার৷''

‘লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স'-এর ভিজিটিং ফেলো জোসেফ হ্যানলন একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের মতপার্থক্য থাকতে পারে৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রায় ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরাও যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন৷ দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে৷ তবুও যুক্তরাষ্ট্র ও ডিএফআইডির মতো দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের এই দক্ষতার স্বীকৃতি না দিয়ে, নিজেরা বেশি জানেন বলে দাবি করায় এই অর্থ ফেরত এসেছে৷ অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের এই বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল৷''

ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ

বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে ২০১০ সালে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিয়েলেন্স ফান্ড' (বিসিসিআর) গঠন করা হয়৷ ডিএফআইডি তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে, বাংলাদেশ সরকারকে এ অর্থ সরাসরি না দিয়ে বিসিসিআই-এর মাধ্যমে দেওয়া হবে৷ তবে এ ধরনের উদ্যোগের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের কঠিন শর্তের কারণে এ অর্থ নিতে শুরু থেকেই অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ৷

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ নিজেই আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড গঠন করেছে৷ নিজস্ব অর্থে এই ফান্ড গঠন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মেকাবেলায় রোল মডেলে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে, যদিও এই ফান্ডের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট' গঠন করেছে সেখানে কেউ প্রভাব বিস্তার করুক, বাংলাদেশ তা চায় না৷ বাংলাদেশ তার নিজস্ব নীতি অনুযায়ী কাজ করছে৷ তাই অন্যের নীতি গ্রহণ করতে আপত্তি আছে দেশটির৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশ মনে করে, উন্নত দেশগুলো পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে৷ তাই সহায়তা করা তাদের দায়িত্ব৷ কিন্তু সেই সহায়তার সঙ্গে কোনো শর্তের ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ সরকার৷ বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে সরকার এখন নিজেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করছে৷ তাই কোনো বদনাম না নিয়ে বাংলাদেশ সরকার চায় নিজেদের অর্থায়নেই জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলার ও পুনর্বাসনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে৷''

বাংলাদেশে জলবায়ু তহবিলের বড় একটি অংশ খরচ করা হয় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর মাধ্যমে৷ পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ভিজিলেন্স ফান্ড তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ মোট ১৯০ মিলিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ এরমধ্যে তারা ১৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার দেয়, যার মধ্যে ৮৭ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে যায়৷ এরসঙ্গে বিশ্বব্যাংকও ছিল৷ পাঁচবছরের ঐ চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় এই ফান্ড আর ব্যবহার করা হচ্ছে না৷''

ঠাকা ফেরত দিয়ে বাংলাদেশ কি ঠিক করছে? আপনার কী মনে হয়? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য