ব্রিটেন ও ইইউ-র মধ্যে সমঝোতা
১২ মার্চ ২০১৯সোমবার প্রায় মাঝরাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে নতুন কিছু আদায় করতে পারলেন৷ ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ব্রিটেনের সংসদে ভোটাভুটির কার্যত কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি আয়ারল্যান্ড সীমান্তে ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত সংশয় দূর করার ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য পেলেন বলা চলে৷ মূল ব্রেক্সিট চুক্তিতে রদবদল না ঘটিয়ে বাড়তি এক নথির মধ্যে ইইউ আইনি আশ্বাস দিয়েছে, যে এই রাষ্ট্রজোট ব্রিটেনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শুল্ক এলাকায় ‘বন্দি' করে রাখতে চায় না৷ সাময়িক এই ব্যবস্থার বদলে স্থায়ী সমাধানসূত্র অর্জন করাই দুই পক্ষের লক্ষ্য৷ এমনকি ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা বিফল হলে ব্রিটেন একতরফাভাবে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে৷ তবে সে রকম পরিস্থিতি এড়াতে ব্রেক্সিট পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তরান্বিত করতেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে৷
সোমবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ভবনে ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জরুরি আলোচনায় বসেন৷ আলোচনার পর মে বলেন, নতুন এই নথি অনুযায়ী ইইউ ইচ্ছাকৃতভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যাকস্টপ প্রয়োগ করতে পারবে না৷ ইয়ুংকার বলেন, ইইউ নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্রিটেনের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়৷ সেইসঙ্গে আইরিশ দ্বীপে শান্তি বজায় রাখাও জরুরি৷ তবে ইয়ুংকার ব্রিটেনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মূল ব্রেক্সিট চুক্তি ও বাড়তি নথির পর সে দেশ তৃতীয় কোনো সুযোগ পাবে না৷ এমনকি গোটা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বানচাল হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
এই আইনি আশ্বাস সম্বল করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সংসদে দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনের চেষ্টা চালাবেন৷ জানুয়ারি মাসে সেই প্রস্তাব পাস করতে গিয়ে শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়েছিলেন টেরেসা মে৷ মঙ্গলবার ব্রিটেনের অ্যাটর্নি জেনারেল সোমবার প্রকাশিত নথি পরীক্ষা করে তার মূল্যায়ন করবেন৷
ইইউ-র সঙ্গে নতুন এই বোঝাপড়া মঙ্গলবারের ভোটাভুটির উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি কর্বিন প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এই বোঝাপড়ার তুমুল বিরোধিতা করে সংসদ সদস্যদের ব্রেক্সিট চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে সব আশ্বাস দিয়েছিলেন, নতুন এই নথির মধ্যে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না৷
ক্ষমতাসীন টোরি দলের মধ্যে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি ও জোটসঙ্গী উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি দলের মনোভাব মঙ্গলবারের ভোটাভুটির ক্ষেত্রে নির্ণয়ক হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এই দুই শিবিরের সংসদ সদস্যরা প্রথমবারের মতো আবার প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে এই চুক্তি কার্যত ভেঙে পড়বে৷ সে ক্ষেত্রে বুধবার চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এবং বৃহস্পতিবার ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর প্রশ্নে ভোটাভুটি হবে৷
সোমবারের বোঝাপড়ার পর ইইউ ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন মেনে নেবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ গণভোট অথবা আগাম নির্বাচনের মতো স্পষ্ট কারণ থাকলে তবেই ইইউ হয়তো গোটা প্রক্রিয়া বছর দুয়েকের জন্য মুলতুবি রাখতে সম্মত হতে পারে৷
এসবি/জেডএইচ (ডিপিএ, রয়টার্স)