ব্লাটারের জীবনের গল্প
সেপ ব্লাটার কীভাবে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার সর্বোচ্চ পদ পেয়েছিলেন? থাকলেন কীভাবে এত বছর? ছবিঘরে থাকছে সেই গল্প৷
অবশেষে মসনদ ছাড়লেন...
বিতর্কিত নির্বাচনে আবার জয়ী হবার চারদিন পরই ফিফা সভাপতির পদ ছাড়লেন সেপ ব্লাটার৷ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন টানা ১৭ বছর৷ পদত্যাগের পর তিনি আর ফুটবলের জন্য দীর্ঘদিন কাজ করে যাওয়া সাবেক ফিফা অধিপতি নন, তার চেয়ে বড় এখন ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিরোমনির ভাবমূর্তি৷ যদিও ব্লাটার শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, তিনি নিজে কোনোদিন কোনো দুর্নীতি করেননি৷
বর্ণময় কেরিয়ার
১৯৭৫ থেকে ২০১৫ – ৪০ বছর ব্লাটার ছিলেন ফিফার সঙ্গে৷ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যোগ দেয়ার আগেও বড় দায়িত্বেই ছিলেন৷ সুইস আইস হকি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন, সুইস স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে৷ ফিফায় কাজ শুরুর আগে আডিডাস-এর কর্ণধার আডল্ফ ডাসলারের একটি ঘড়ি কোম্পানির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বেও দেখা গেছে তাঁকে৷
যেভাবে মসনদে....
ফিফায় প্রথম উল্লেখযোগ্য পদ পেয়েছিলেন ১৯৮১ সালে৷ সেবার জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান ব্লাটার৷ শীর্ষে উঠতে লেগেছে ১৭ বছর৷ তখন ফিফা সভাপতি ছিলেন জোয়াও আভেলাঞ্জ৷ ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে তখনকার উয়েফা প্রেসিডেন্ট লেনার্ট ইয়োহানসনকে হারিয়ে ব্লাটার হয়ে যান ফিফা সভাপতি৷ তখনই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে৷ ভোট কিনে জয়ী হবার অভিযোগটাকে ব্লাটার তখন পাত্তাই দেননি৷
বিশাল ক্ষতি
ফিফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পরই ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তখনকার জেনারেল সেক্রেটারি মিশেল জেন-রুফিনেন৷ সেবার বিপননে ফিফার ১০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়৷ সেই ক্ষতির জন্য ব্লাটারের দুর্বল ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেন রুফিনেন৷ তদন্তের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল৷ শেষ পর্যন্ত ব্লাটার তা হতে দেননি৷
জার্মানিকে ‘উপহার’!
২০০০ সালের বিশ্বকাপ হয়েছিল জার্মানিতে৷ ধারণা করা হয়, জার্মানির আয়োজক হওয়ার পিছনে ব্লাটারের খুব বড় ভূমিকা ছিল৷ ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো সভাপতির পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেন ব্লাটার৷ নির্বাচনে জিততে কোনো অসুবিধা হয়নি তাঁর৷
প্রতিপক্ষ ঘায়েল
২০১১ সালে এক সময়ের ‘ব্লাটারের লোক’ মোহাম্মদ বিন হাম্মাম দাঁড়িয়ে যান ব্লাটারের বিপক্ষে৷ কাতারের এই ফুটবল সংগঠক কিন্তু নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে সভাপতি হতে পারেননি৷ মধ্যপ্রাচ্যের ভোট কেনার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে৷ বাধ্য হয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয় তাঁকে৷ পরে তাঁকে ফুটবল থেকে আজীবন নিষিদ্ধও করে ফিফা৷
বেকেনবাউয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং...
২০১৪ সালে জার্মান ফুটবল কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ারকে বহিষ্কার করে ফিফা৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, জার্মানির জন্য ২০০০ বিশ্বকাপে আয়োজক হওয়ার অধিকার তিনি ব্লাটারের কাছ থেকে কিনেছেন৷ একটা সময় পর্যন্ত দু’জনের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল৷ এখন বেকেনবাউয়ার অকপটেই স্বীকার করেন, সেই সুসম্পর্কের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই৷
ব্লাটার এবং ম্যান্ডেলা
কেরিয়ারে সবসময়ই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা সব পর্যায়ের ক্ষমতাধরদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন ব্লাটার৷ জাতিসংঘের মহাপরিচালক, বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, এমনকি পোপ-এর সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক৷ ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর৷ ম্যান্ডেলাকে তিনি কথা দিয়েছিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজক করতে যথাসাধ্য করবেন৷ কথা রেখেছিলেন ব্লাটার৷
ব্লাটার যিশু বা মাদার টেরেসার মতো!
ব্লাটার কিন্তু সর্বত্র নিন্দিত বা সমালোচিত নন৷ চিরকাল ক্ষমতা উপভোগ করেছেন৷ ঘুরতে ভালোবাসেন৷ রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে সফর করেছেন প্রায় গোটা বিশ্ব৷ কোনো কোনো অঞ্চলে ভীষণ শ্রদ্ধার পাত্র তিনি৷ আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে ফুটবলের উন্নয়নের জন্য প্রচুর অনুদান দিয়েছেন তিনি৷ ওই দুই অঞ্চলের ফুটবল কর্তাদের কাছে তাই তিনি যিশু বা মাদার টেরেসার মতো শ্রদ্ধেয়৷