ভারতে গণধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মৃত্যু
২৯ ডিসেম্বর ২০১২গত ১৬ই ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসে ছয় তরুণের হাতে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের শিকার হন ২৩ বছর বয়সি মেডিকেল ছাত্রী৷ তাঁকে গণধর্ষণের আগে এবং পরে বখাটেরা লোহা দিয়ে এবং নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়৷ পরে চলন্ত বাস থেকে মেয়েটিকে এবং তার ছেলে বন্ধুকে রাস্তায় ফেলে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা৷ এই ঘটনার পর প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ভারতের জনতা৷ গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নতুন দিল্লিতে চলেছে এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷ এদিকে, জনতার বিক্ষোভের মুখে ঐ ঘটনার সাথে জড়িত আটক ছয় তরুণের দৃষ্টান্তমূলক ও দ্রুততম সময়ে শাস্তির আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷
অন্যদিকে, মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য চলছিল জোর প্রচেষ্টা৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র দু'দিন আগে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ তবে নানা মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, উন্নত চিকিৎসার জন্য নয় বরং ভারতের মাটিতে মেয়েটির মৃত্যু হলে নতুন দিল্লিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতার মাত্রা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই ভারত সরকার তাঁকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিল৷ আর শনিবার সকালে হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কেলভিন লোহ প্রকাশ করেন যে, ‘‘মেয়েটি বেশ দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকার জন্য অসহ্য যন্ত্রণার সাথে লড়াই করেছে, কিন্তু তাঁর দেহে আঘাতের পরিমাণ এতোটাই বেশি ছিল যে, তিনি শেষ পর্যন্ত তার সাথে পেরে ওঠেননি৷''
স্থানীয় সময় সকাল পৌনে পাঁচটায় তিনি মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে৷ মৃত্যুর সময় মেয়েটির বাবা-মা তাঁর পাশেই ছিলেন বলে জানা গেছে৷ শনিবার বিকেলেই তাঁর মৃতদেহ বিশেষ বিমানে করে নতুন দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে ভারতের রাষ্ট্রদূত টিসিএ রাঘওয়ান৷
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷ রাষ্ট্রপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে বীর সাহসী মেয়েটি তাঁর নিজের মর্যাদা এবং জীবন রক্ষায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়েছে তাঁর এমন করুণ মৃত্যুতে আমি শোকাহত৷ তাঁর মৃত্যু আমরা বৃথা যেতে দেবো না৷ এমন নৃশংস ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করবো৷'' প্রায় একই সুরে প্রধানমন্ত্রী সিং বলেন, আমি তাঁর পরিবার এবং ভারতবাসীকে বলতে চাই, যখন তিনি জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন, এখন আমাদের সবার দায়িত্ব, তাঁর মৃত্যু যেন বৃথা না যায়, সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা৷''
এদিকে, গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যুতে বিক্ষোভ আরো সহিংস রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কায় রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ ‘ইন্ডিয়া গেট' এবং তার আশেপাশের এলাকায় প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করেছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ এছাড়া নগরীর নানা প্রান্ত থেকে প্রায় দশটি মেট্রোরেল বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ফলে বিক্ষোভকারীরা শনিবার জন্তর মন্তরে সমবেত হয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শান্তিপূর্ণভাবে শোক ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই৷
এএইচ/আরআই (ডিপিএ, রয়টার্স, পিটিআই)