২৪ ঘণ্টা সৌরবিদ্যুৎ
১৯ জুলাই ২০১৩ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মাউন্ট আবু হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান৷ গোলো পিলৎস জায়গাটিকে খুব পছন্দ করেন৷ জার্মানির এই কাঠ মিস্ত্রি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে বসবাস করছেন৷ তিনি একজন যোগী৷ প্রতিদিনই ‘মেডিটেশন' বা ধ্যান করেন তিনি৷
তবে শুধু যোগাসন নয়, গোলো-র হাতে আরও একটি কাজ আছে৷ একটি থার্মাল সোলার প্লান্ট তৈরির কাজ চলছে৷ এর মধ্যেই প্রায় ৮০০টি খাঁচা তৈরি হয়ে গেছে৷ এবার তাতে বিশাল রিফ্লেক্টর বসাতে হবে৷ গোলো পিলৎস নিজের উদ্যোগেই সৌরশক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমাদের কাছে নতুন ধরনের এক রিসিভার আছে, যা দিয়ে সৌরশক্তি প্রায় ১৬ ঘণ্টা স্টোর করা যায়৷ আমরা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে চাই, যা গোটা বিশ্বে এখনো সম্ভব হয় নি৷ অন্য কেউ থার্মাল সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র সারা দিন চালাতে পারে নি৷''
ভারত ও জার্মানির সরকার যৌথভাবে এই সোলার পার্কে সহায়তা করছে৷ ভারতের জাতীয় সৌরবিদ্যুৎ নীতির আওতায় এটা একটা মডেল প্রকল্প৷ ভারত সরকার দেশে আরও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়৷ বর্তমানে এর অনুপাত এক শতাংশেরও কম৷ নতুন এই প্লান্ট ব্রহ্মকুমারীদের এই আশ্রমের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে বলে সবার আশা৷ গোলো পিলৎস-ও এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য৷
বছরে কয়েকবার তীর্থযাত্রীরা এখানে আসেন৷ তাদের সংখ্যা ২০,০০০ ছাড়িয়ে যায়৷ এছাড়া মাউন্ট আবু-র আশ্রমে কয়েকশো ভক্ত পাকাপাকিভাবে বসবাস করেন৷
ব্রহ্মকুমারীরা পরিবেশ সংরক্ষণকে দায়িত্ব বলে মনে করেন৷ এখনই আশ্রমের ছাদে বেশ কিছু সোলার প্যানেল বসিয়ে রান্নার কাজ চলছে৷ সোলার কুকার স্টিম বা বাষ্প তৈরি করে৷ তা কাজে লাগিয়ে রান্নাঘরের চাহিদা মেটানো হয়৷ দিনে তিনবার রান্না হয়৷ সবার জন্য নিরামিষ খাবার৷ ব্রহ্মকুমারীদের বিশ্বাস, সৌরশক্তি দিয়ে রান্না করলে তা আরও শুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর হয়৷
নতুন এই প্লান্টের পিছনে রয়েছে গোলো পিলৎস-এর উদ্যোগ৷ বাকিদের সঙ্গে তিনি এমন সব নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখেন, যা ভারতে সহজেই কাজে লাগানো সম্ভব৷ যেমন ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি নতুন স্টোরেজে কীভাবে থার্মাল ইনসুলেশন করা সম্ভব৷ সবকিছু সস্তা হতে হবে, সহজেই নকল করা যাবে৷ যোগীদের জন্য কাজটা মোটেই সহজ নয়৷
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর জন্য বাকি অর্থ সংগ্রহ করা৷ সবাই মিলে কাজ করলেও প্রকল্পের খরচ বেড়েই চলেছে৷ মনে রাখতে হবে, ভারতে মূল্যস্ফীতির মাত্রা প্রায় ১০ শতাংশ৷
সোলার পার্ক-এর কল্যাণে আশ্রমকে আর গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিতে হবে না, এটাই হলো লক্ষ্য৷ তবে সোলার থার্মাল প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও গবেষণা করে খরচ কমানোও অন্যতম উদ্দেশ্য৷
প্রায় ৫০ লক্ষ ইউরো কম পড়ছে৷ সেই অভাব মেটানোর লক্ষ্যে আলোচনা চলছে৷ তবে যোগী হিসেবে গোলো পিলৎস বিশেষ কৌশল কাজে লাগিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘এই অবস্থায় মেডিটেশন বা ধ্যান বিশেষভাবে সাহায্য করে৷ ঠান্ডা মাথায় সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ভাবতে হবে৷ উত্তেজিত হলে চলবে না৷ তখন কিন্তু বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে যায়৷''
ভারত ও জার্মানি – দুই দেশের সরকারই চায় প্রকল্প শেষ হোক৷ প্রয়োজনে তারা বাড়তি অর্থ ঢালতেও প্রস্তুত৷ উদ্দেশ্য, মাউন্ট আবুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এমন আরও প্রকল্প গড়ে উঠুক৷ শুধু ভক্তরা নয়, সারা ভারতের মানুষই যেন এর সুফল ভোগ করতে পারে৷
এসবি/ডিজি