ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির দেশ ভারত
১১ মে ২০১৬দিল্লি ও ভারতের অন্যান্য শহরে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা কমছে তো না-ই, বরং বেড়েই চলেছে৷ প্রতি ২০ মিনিটে একটি ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটছে৷ উদ্বেগের বিষয়, ইদানীং আবার বিদেশিনীরাও এর শিকার হচ্ছেন৷
গত ৭ই মে শনিবারের ঘটনা৷ দিল্লির কাছে ২৫ বছরের এক বেলজিয়ান তরুণীর শ্লীলতাহানি করে ওলা কোম্পানির এক ট্যাক্সি চালক৷ পুলিশ অবশ্য ট্যাক্সি চালককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়৷ বছর দেড়েক আগে এক জার্মান তরুণীকে যৌন হেনস্থা করে দিল্লির এক অটোরিক্সা চালক৷ তারই মাস দুয়েক আগে নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের কাছে ৫২ বছরের এক ডেনিশ মহিলাকে গণধর্ষণ করে জনা সাতেক ব্যক্তি৷ ঐ সময়েই শ্লীলতাহানির অভিজ্ঞতা হয় এক মার্কিন এবং এক উগান্ডান মহিলার৷ এই রকম অনেক আছে৷ এ তো শুধু হিমশৈলের চূড়ামাত্র৷
প্রথম প্রথম মনে করা হতো, ভারতে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি নিবারণে চলতি আইন যথেষ্ট কড়া নয়৷ দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হয় না৷ আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ নারীবাদী সংগঠনগুলির বক্তব্য, যেহেতু চলতি ‘অ্যান্টি-রেপ' আইনে স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই, তাই বিচারকদের নিজস্ব বিচারবোধের ওপর নির্ভর করতে হয়৷ তাই অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে হয়৷ অর্থাৎ বিচারক যদি মনে করেন ধর্ষকের অপরাধ ততটা গুরুতর নয়, যতটা ধর্ষিতা বলছে, সেক্ষেত্রে অপরাধীর লঘু শাস্তি হয়৷ কিংবা ধর্ষিতা কুমারী না বিবাহিতা, মহিলার চরিত্র ত্রুটিমুক্ত কিনা এসবও বিচার্য হয়৷ সেক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে আসামি বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে৷
দ্বিতীয়ত, ভারতের আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ, প্রলম্বিত ও জটিল৷ বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত না হলে সাক্ষ্য প্রমাণ দুর্বল হয়ে পড়ে৷ দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডের পর এই সংক্রান্ত আইন কঠোর করতে ভার্মা কমিশনের সুপারিশ মেনে তা সংশোধন করা হয়৷ অপরাধী সাব্যস্ত হলে আসামির হয় যাবজ্জীবন জেল বা বিরলতম বিরল ঘটনার ক্ষেত্রে ফাঁসি হতে পারে৷ তাতেও সংখ্যাটা কমেনি, বরং বাড়ছে৷ শুধু কি তাই? ফাঁসির দড়ি নিয়েও দড়ি টানাটানি৷ ভারত নিজে জাতিসংঘে ফাঁসির বিরোধীতা করে এসেছে৷ বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলিও ফাঁসিকে বলেছে চরম নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক৷ মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়াবার পন্থা নয়৷ আসলে সমস্যার শিকড় আরও গভীরে যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুর্নীতিগ্রস্থ পচাগলা এই সমাজ ব্যবস্থা৷ শুধু কঠোর আইনই যথেষ্ট নয়, এর সঠিক বাস্তবায়নও একান্ত জরুরি৷ দ্রুত বিচারের জন্য ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট তারই অঙ্গ৷
এরই জের টেনে দিল্লির নারীবাদী জাগরি সংগঠনের মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘আইন কানুন যা আছে তা আছে, তবে আসল কথা পুরুষদের মাইন্ড-সেট বা মানসিকতায় আনতে হবে পরিবর্তন৷ নারীদের যে একটা আলাদা ব্যক্তি পরিচয় আছে, সেটাকে সম্মান দিতে হবে৷ মহিলা বলেই তাঁকে অন্য চোখে দেখতে হবে, এ কেমন কথা? এখানে সরকারের চেয়ে বড় ভূমিকা পুরুষ নাগরিক সমাজের৷'' বেলজিয়ান তরুণীর শ্লীলতাহানি প্রসঙ্গে জাগরির বক্তব্য, ‘‘এটা দেশি বা বিদেশি মহিলার প্রশ্ন নয়, সমগ্র বিশ্বের নারী সমাজের৷'' অতি সম্প্রতি কেরালা রাজ্যে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে আগামীকাল দিল্লিতে বের হবে প্রতিবাদ মিছিল৷