1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে পাঁচ রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১১ ডিসেম্বর ২০১৮

পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলে জোর ধাক্কা খেলো বিজেপি৷ এর নিরিখে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মহাজোট গঠন প্রক্রিয়ায় আরো গতি এলো৷

https://p.dw.com/p/39tFf
ছবি: Reuters/D. Siddiqui

সোমবার দিল্লিতে ২০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের এক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে৷ সংসদে ভেতরে ও বাইরে মোদী সরকারের ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে এক কন্ঠে৷

ভারতের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনি ফলাফলে বিজেপি কার্যত ধরাশায়ী৷ রাজস্থান, ছত্তিসগড় শাসক দল বিজেপির হাতছাড়া৷ কংগ্রেস এখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দল৷ রাজস্থানে ১৯৯টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ১০১টি আসন৷ শাসকদল বিজেপি ৭৬টি৷ বিজেপি শাসিত ছত্তিসগড়ের ৯০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছে ৬৫টি আসন এবং বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৬টি আসন৷ ১১৯টি আসনের তেলেঙ্গানা রাজ্যে টিআরএস দলের জয়জয়কার৷ কংগ্রেস ও বিজেপি টিআরএসের ধারেকছেও আসতে পারেনি৷ টিআরএস একাই পেয়েছে ৮৬টি আসন৷ বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি আসনে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সমানে সমানে টক্কর৷ তবে বিজেপি সামান্য এগিয়ে৷ ধরে রেখেছে ১১২টি আসন আর কংগ্রেস কেড়ে নিয়েছে ১০১টি আসন৷

কংগ্রেসশাসিত মিজোরামের মোট ৪০টি আসনে কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট৷  তবে রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে স্থিতিশীল সরকার গড়তে কংগ্রেসকে কাছে টানতে হবে ছোট ছোট দলকে৷ একই কথা খাটে মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রেও৷ ভোটের ফলাফল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদী এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি৷

বিজেপি সরকার কেন পায়ের তলার জমি হারালো, তার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কৃষকদের আর্থিক দুরবস্থা, কৃষকদের আত্মহত্যা এবং কৃষিজীবিদের আন্দোলন বিজেপি সরকারের পতনে বড় ভূমিকা নিয়েছে৷ রাজস্থানে এবং মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে৷ কৃষকদের অসন্তোষ গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধস নামিয়েছে৷ আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনে তার অভিঘাত অবশ্যই পড়তে পারে৷ যদি বিরোধী জোট অটুট থাকে, তাহলে তো কথাই নেই৷ বিজেপি গদি ধরে রাখতে পারবে না বলেই মনে হয়৷''

‘‘তবে এখনই যদি রাহুল গান্ধীকে মহাজোটের নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়, তাহলে কিন্তু গোলমাল বাঁধতে পারে৷ সেটা না করে যদি বুদ্ধিমানের মতো কর্মসূচিভিত্তিক কাজ করা হয়, তাহলে জোটের জন্য ভালো হবে,'' বললেন অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায়৷

‘কৃষকদের আর্থিক দুরবস্থা, কৃষকদের আত্মহত্যা এবং কৃষিজীবিদের আন্দোলন বিজেপি সরকারের পতনে বড় ভূমিকা নিয়েছে’

 পাঁচটি রাজ্যে কংগ্রেস ভালো ফল করার কৃতিত্ব কি তাহলে রাহুল গান্ধীর নয়? ‘‘মোটেই নয়৷ কৃতিত্ব সাধারণ মানুষের৷ তারসঙ্গে অবদান রেখেছে বামদল এবং কৃষক মোর্চা৷ বিভিন্ন সংগঠন কিন্তু একমুখী আন্দোলন করে গেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে৷ ২০১৪ সালে মোদী তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছেন৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবিদের আশা পূরণ হয়নি৷ মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে বিজেপির ভোট শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থেকেছে৷ যেহেতু গ্রামাঞ্চলের ভোট সংখ্যা বেশি, তাই বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে এই ধস৷ ছত্তিসগড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট গ্রামীণ এলাকায়৷ মোট কথা, কৃষক সমস্যা, বেকারত্ব, দলিতদের মধ্যে অসন্তোষ বিজেপির পতনের মুখ্য কারণ৷ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা শহরাঞ্চলে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে পারেনি'' ডয়চে ভেলেকে বললেন, রাষ্ট্রনীতিবিদ অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায়৷

মোদীর বিজেপি সরকারকে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কোণঠাসা করতে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির একজোট হবার তাগিদে গতি এনেছে সন্দেহ নেই৷ সোমবার ২১টি রাজনৈতিক দলের নেতারা দিল্লিতে এক বৈঠকে মহাজোট গঠম প্রক্রিয়ার এক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেন৷ আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনের রণকৌশলও ঠিক হবে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ফলাফল যাচাই করে৷ বৈঠকের শুরুতে কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্র বিপদাপন্ন৷ তাই দরকার মহাজোট৷''

বৈঠকের শেষে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিরোধী ঐক্য ও সমন্বয় কেড়ে নেবে মোদী সরকারের পালের হাওয়া৷ তুলে ধরবে বিজেপি সরকারের ব্যর্থতাকে৷ যেমন, কৃষিজীবীদের দুরবস্থা, বিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো স্বশাসিত সংস্থাগুলিতে সরকারের অহেতুক হস্তক্ষেপ, যার ফলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্ণর উর্জিত প্যাটেল৷ এছাড়া আছে সাম্প্রদায়িক হিংসা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা থেকে বিমুদ্রাকরণ, রাফাল দুর্নীতি ইত্যাদি৷'' রাহুল গান্ধীর কথায়, বিরোধী দলগুলির এই জোট কাজ করবে সংসদের ভেতরে ও বাইরে৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে আজ৷ সংসদে কী কী ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হবে তা-ও ঠিক করা হয়েছে৷

বৈঠকে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মনে করেন, বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পাশাপাশি বিরোধী ঐক্য ও মহাজোট বজায় রাখতে হবে৷ নির্বাচনে আসন রফা হবে অবশ্য রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ভিত্তিতে, যাতে ভোট ভাগ হতে না পারে৷  না হলে মোদী সরকারের হাত থেকে কারোরই নিস্তার নেই৷ কোনো দলেরই এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নয়৷ এই মহাজোট গঠনের বৈঠকে প্রধান উদ্যোক্তা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু মনে করেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই সব বিরোধী দল আক্রমণাত্মক হবে৷ রাষ্ট্রপতির কাছেও যাবে৷ আরো দল যোগ দেবে এই মহাজোটে৷ তবে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মনঃপুত নয়, এমনটাই শোনা গেছে৷ মহাজোট বৈঠকে অবশ্য অনুপস্থিত থাকে উত্তরপ্রদেশের বড় দল অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন পার্টি৷ কিন্তু পাঁচটি রাজ্যের ভোটের ফলাফল দেখে বিএসপি এবং এসপির মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদব মহাজোটে শামিল হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷