ভারতে মেয়েরা রাগবি খেলছে
৩ আগস্ট ২০১১গত দশ বছরে ভারতের মেয়েরা রাগবি খেলায় বেশ এগিয়ে গেছে৷ তৈরি হয়েছে দশটি দল৷ গোটা ভারতে প্রায় কয়েক হাজার মেয়ে নিয়মিত রাগবি খেলছে – লক্ষ্য পেশাদার রাগবি খেলোয়াড় হওয়া৷
চেন্নাইয়ে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাগবি মাঠে একদল মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ রোদ বা তাপমাত্রাকে গ্রাহ্য করার সময় নেই৷ বিকেল চারটায় রোদ তখনো বেশ কড়া৷ কিন্তু প্রশিক্ষণ থেকে এক মিনিটও দূরে থাকতে রাজি নয় কেউই৷
রাগবি মাঠের চারপাশে মেয়েরা দৌড়াচ্ছে৷ বল ধরার চেষ্টা করছে, একজন আরেক জনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এবং পরমুহূর্তেই আবার উঠে দাঁড়িয়ে বলের পেছনে পেছনে ছুটছে৷ প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে কয়েক ঘণ্টা চলে রাগবির প্রশিক্ষণ৷ ২০ বছরের রাখি সবচেয়ে ভাল খেলে৷ বেশ কয়েকটি জাতীয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে রাখির দল৷ রাখি বলল,‘‘আমি খেলাধুলা করতে ভীষণ পছন্দ করি৷ আমরা যখন প্রতিদিন মাঠে নামি প্রশিক্ষণ নেই – তখন আমরা শুধুই একটি দল৷ আমরা নিজেদের ভাল খেলতে, খেলা চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করি৷ আমরা শীর্ষে থাকতে চাই৷ প্রতিদিনই নতুন নতুন মেয়ের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়৷ এর ফলে আমরা মনোযোগ দিতে পারি, নতুন সঙ্গীকে অনেক কিছু শেখাতে পারি৷ বিশেষ করে প্রতিদিনের রুটিন থেকে কিছুক্ষণ মুক্তি পাওয়া যায় রাগবির মাঠে এসে৷ এই সময়টিতে অনেক কিছুই আমি ভুলে যাই – আমি পুরোপুরি মিশে যাই রাগবির সঙ্গে৷''
মেয়ে কালো হয়ে যাচ্ছে – এটা কোন খেলা হল?
দলের অন্যান্য মেয়ের মতোই রাখির জীবনও রাগবি মাঠের বাইরে একেবারে ভিন্ন৷ ট্র্যাকস্যুট এবং ট্রাউজার বা শর্টস নয়, মাঠের বাইরে সালোয়ার-কামিজ পরে চলাফেরা করে রাখি৷ কেউ তখন তাকে দেখলে বলবে না যে দিনে কয়েক ঘণ্টা করে মেয়েটি বল নিয়ে মাঠে দৌড়ায়৷ তবে রাখির পরিবার মনে করে এসব না করে রাখির পড়াশোনায় মন দেয়া উচিত এবং ঘরের কাজে আরো বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত৷ এছাড়া রাগবি হচ্ছে পুরুষদের খেলা৷ একটি মেয়ে এভাবে বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে, তাতে পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে তারা মনে করে৷ রাখির ভাষ্য,‘‘আমাদের প্রশিক্ষণ হয় রোদে এর ফলে আমি আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি কালো হয়ে গিয়েছি৷ আগে ছিলাম সবচেয়ে ফর্সা আর এখন আমি সবচেয়ে কালো৷ আমার বাবা-মা সবসময়ই আমাকে প্রশ্ন করে, ‘কেন নিজেকে এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছি? বছর দুয়েকের মধ্যে আমার বিয়ে হবে – কিন্তু এত কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? এত কালো মেয়েকে বিয়ে দিতে হলে আরো বেশি যৌতুক দিতে হবে আমাদের'৷ আমি মনে করি এসব কোন সমস্যাই নয়৷ আমি দু বছর ঘরে বসে থাকলেই আমার পুরনো রঙ ফিরে আসবে৷''
এতদিন রাখি বাবা-মাকে অনেকভাবে বুঝিয়েছে৷ কিন্তু এবছর সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেছে৷ এখন তার বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে৷
খেলার কোটায় মেয়েরা তাদের জায়গা করে নিতে পারবে
এই ঘটনা শুধু রাখির জীবনেই ঘটছে না৷ যেসব মেয়ে রাগবি খেলছে তাদের সবার গল্পই এক রকম৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় প্রথম তিন বছরই শুধু তারা রাগবি খেলতে পারে৷ এরপর যদি কেউ মাস্টার্সে ভর্তি হয়, তাহলে হয়তো আরো দুই বছর৷ এরপর খেলা বন্ধ, কারণ তখন হয়তো বিয়ের জন্য নয়তো চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করতে মেয়েদের ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়৷
চেন্নাই তূলনামূলকভাবে বেশ রক্ষণশীল একটি শহর৷ মুম্বই, বেঙ্গালুরু, পুণে এবং কলকাতার মেয়েরা কিছুটা এগিয়ে৷ রাগবি খেলা চেন্নাইয়ের সমাজের চিত্র পাল্টে দিয়েছে কারণ অনেক বাবা-মা'ই পূর্ণ সমর্থন করেছেন খেলাটি৷ এছাড়া স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খেলাটিকে বেছে নিয়েছে৷ অনেক অল্প বয়স থেকেই মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷ চেন্নাইয়ে মহিলাদের জন্য রাগবি খেলাটির আয়োজক জন জেইন৷ তিনি জানালেন,‘‘ভারতের রেলওয়ে, সেনাবাহিনী, পুলিশ – সব জায়গাতেই খেলোয়াড়দের একটা কোটা থাকে৷ তবে এসব কোটাতে শুধু ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেট বল, ক্রিকেট এবং সাঁতার দেখা যায়৷ রাগবির স্থান এর মধ্যে নেই৷ আর এ কারণেই বড় কোন কোম্পানিতে কোন রাগবি খেলোয়াড় চোখে পড়বে না৷ রাগবির একটি কোটা তৈরির চেষ্টা আমরা করছি, মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করছি৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন