1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে শিশুশ্রমের অভিশাপ

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি৮ অক্টোবর ২০১৪

অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিশ্বের মধ্যে ভারতেই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সবথেকে বেশি৷ আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৬ কোটি থেকে ১২ কোটি৷ তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি, যেটা লোকচক্ষুর বাইরে থেকে যায়৷

https://p.dw.com/p/1DRh0
Kinderarbeit in Delhi (Indien)
ছবি: DW/A. Chatterjee

৭ থেকে ১৪ বছরের বালক-বালিকারা সাধারণত শিশু শ্রমিকের মধ্যে পড়ে৷ সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষার অভাবই শিশু শ্রমের অন্যতম কারণ৷ উন্নত দেশগুলিতে যে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে, ভারতের মতো দেশগুলিতে তার বিন্দু বিসর্গ নেই৷ ধনী দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে, উদার অর্থনীতির কারণে বেসরকারীকরণ হয়েছে লাগাম ছাড়া, সমাজের একটা বড় অংশ হয়ে পড়েছে বেকার, যার কোপ গিয়ে পড়ছে সমাজের শিশু জীবনে৷ সর্বজনীন শিক্ষা বা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত গরিব পরিবারের অভিভাবকরা তখন বাধ্য হয়ে অন্ন সংস্থানের তাগিদে নাবালক নাবালিকাদের পাঠায় কাজ করতে৷

বিপজ্জনক কাজে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করে সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়৷ বিপজ্জনক কাজ বলতে বলা হয়েছে ঘরের ঝি চাকরের কাজ, রাস্তার ধারের খাবার দোকান, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা ধাবা, চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁর কাজ, পাথর ভাঙার কাজ এবং মোটর গ্যারেজের কাজ৷ এইসব কাজে না আছে কাজের নির্দিষ্ট সময়, না আছে উপযুক্ত মজুরি৷ রোজ ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে মজুরি পায় নগণ্য৷ চরম শোষন চলে এইসব শিশু শ্রমিকদের ওপর৷ ঘর গৃহস্থালির কাজে নাবালিকাদের হামেশাই যৌন শোষণ এবং অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ এমন কি পেট ভরে খেতে পর্যন্ত দেয়া হয় না৷ দিল্লিতেই কাজের মেয়েদের ওপর নির্যাতনের একাধিক করুণ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে৷ যেমন এক সরকারি আমলা কাজের নাবালিকাকে ঘরে বন্ধ করে বেড়াতে চলে গেছে৷ জনৈক সাংসদ ও বিধায়কের স্ত্রী কাজের মেয়ের গায়ে গরম খুন্তি দিয়ে পুড়িয়ে দেয় কথা না শোনার কথিত অপরাধে৷ এই নিয়ে পুলিশ ‘কেস' করে কিছু স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা৷ তাই মনে হয় সরকার আইন করেই খালাস৷ তার সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে কারো যেন মাথাব্যথা নেই৷

Kinderarbeit in Delhi (Indien)
‘দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষার অভাবই শিশু শ্রমের অন্যতম কারণ’ছবি: DW/A. Chatterjee

দেখা গেছে শিশু শ্রমিকের বেশির ভাগ আসে তপশিলি জাতি-উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর জাতি এবং দলিত সম্প্রদায় থেকে৷ এছাড়া একটা অংশ আসে বাস্তুহারা পরিবার থেকে উন্নয়নের কাজে যাঁদের ভিটে-মাটি হারাতে হয়৷ কিংবা সংঘর্ষ পীড়িত এলাকা থেকে৷ এছাডাও আরো একটা মর্মান্তিক দিক আছে শিশু শ্রমিকদের৷ সেটা হলো বেগার শিশু শ্রমিক প্রথা৷ শিশুর অভিভাবক হয়ত মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে এই শর্তে যে, কাজ করে তা শোধ করে দেবে৷ সেটাতেও যুক্ত করা হয় শিশুদের বিশেষ করে চাষাবাদের কাজে কিংবা ইঁটভাটা বা পাথর ভাঙার কাজে৷ ভারতে শিশু শ্রমের সম্পূর্ণ বিলোপসাধনের জন্য সবথেকে যেটা দরকার, সেটা হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর দারিদ্র্য দূরীকরণ৷ দারিদ্র্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শিশু শ্রম৷ নিয়োগকর্তারা কম মজুরিতে শিশুদের খাটায় অনেক গুণ বেশি৷ আর দরকার বাধ্যতামূলক সর্বজনিন শিক্ষা ব্যবস্থা

Kinderarbeit in Delhi (Indien)
ভারতে শিশু শ্রমিকদের বেশির ভাগ আসে তপশিলি জাতি-উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর জাতি এবং দলিত সম্প্রদায় থেকেছবি: DW/A. Chatterjee
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য