ভারী বৃষ্টিতে সিলেটে ফের বন্যা আতঙ্ক
২৯ জুন ২০২২আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে কিছু মানুষ বাড়িঘরে ফিরে গেলেও এখনও বিশুদ্ধ খাবার পানি আর খাবারের সংকটের কারণে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কাজ চলছে জোরকদমে৷ পানি না নামায় অনেক মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে৷
এর মধ্যেই জেলায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷ ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে বর্ষণ হচ্ছে৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘আগে থেকেই মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত হবে এই পূর্বাভাস ছিল৷ আগামীকাল ও পরশুও বৃষ্টি হবে৷”
‘‘এই সময়ে উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তবে আগের মতো টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে না৷ আগামী মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে আসবে৷’’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভারতের মেঘালয় ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হচ্ছে ফলে পানি কিছুটা বাড়ছে৷ বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷”
তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে৷ যদিও এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে৷
‘‘বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ৮.৯৪ মিটার উচ্চতায় রয়েছে; তার মানে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ গত ১৫ দিন ধরেই ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে৷’’
গত ৪৮ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৬ সেন্টিমিটার৷ অপরদিকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে৷ এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭.৮০ মিটার অর্থাৎ, এখানে এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে পানি৷
তাছাড়া সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমা নদীর পানিও গত দুদিন ধরে বাড়ছে বলে পাউবো জানিয়েছে৷
পাউবোর আবহাওয়া ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় ছাতকে ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এবং সুনামগঞ্জ সদরে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ এ ছাড়া উজানেও ভারী বর্ষণ হচ্ছে৷ এ কারণে পানি বাড়ছে৷’’
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণের ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ৷ বিভিন্ন এলাকার ভেসে ওঠা রাস্তাঘাট আবারও কিছুটা প্লাবিত হয়েছে৷
সুনামগঞ্জ হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, গত ১৬ জুন রাতের ভয়াবহ বৃষ্টি, ঝড় ও বজ্রপাত আমাদের ভিতরে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে গেছে৷ আমরা দেখেছি, কয়েক ঘণ্টায় সবকিছু চোখের সামনে ডুবে গিয়ে মানুষকে অসহায় করে গেছে৷
‘‘এখন এই সময়ে বৃষ্টি ও ঝড় হলে আমাদের বুক কাঁপে৷ কয়েকদিন আগে বন্যা মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না৷ প্রশাসনের উচিত শক্ত প্রস্তুতি রাখা৷’’
এদিকে সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪ হাজার বানভাসি মানুষ আছেন৷ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)