ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের পলায়নে বিরক্ত প্রশাসন
২৬ আগস্ট ২০২১ভাসানচর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ পর্যন্ত ৬৬৮ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ১৩ জন স্বেচ্ছায় আবার ফিরে এসেছে৷ পালিয়ে যাওয়ার সময় সাগরে নৌকা ডুবে ১৪ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু মারা গেছে৷
ওসি আরো জানান, ‘‘এছাড়া এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দুইশ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে৷ তাদের পালাতে সহায়তার অভিযোগে দালাল সন্দেহে ১৭ জন বাঙালিকে আটক করা হয়েছে৷’’
এসব ঘটনায় ভাসানচর থানায় আটটি মামলা হয়েছে বলেও ওসি জানান৷ নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছয় দফায় ১৮ হাজার ৩৩৪ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ হাজার ৫৯৩ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে এখানে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে আসার পর থেকে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর আলাউদ্দিন গ্রামের ৫০-৬০ জনের একটি চক্র তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে৷ এই চক্রটি এক সময় নদীতে দস্যুতার সঙ্গে জড়িত ছিল৷
তারা জনপ্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতের অন্ধকারে ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চর আলাউদ্দিনের গোপাল ঘাটে নামিয়ে সেখান থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে জেলা সদরের সোনাপুর বাস টার্মিনালে পৌঁছে দেয়৷
রোহিঙ্গা পাচারের অভিযোগে চর আলাউদ্দিন গ্রামের সাইফুল, নুর ইসলাম ও রুবেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন কারাগারে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ভাসানচর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকে সাগরে মাছ ধরার অজুহাতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে৷
ভাসানচরে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, ‘‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে৷ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখানে থাকতে চাচ্ছে৷ দুচার জন দালাল তাদেরকে ফুসলিয়ে বের করতে চাচ্ছে৷নেভি, কোস্টগার্ড তাদের বেইজে থাকে, প্রতিদিন অনেক রোহিঙ্গা নদীতে মাছ ধরতে যায়৷ বিশাল দ্বীপের কোন পাশ দিয়ে নৌকায় করে দালালের মাধ্যমে পালিয়ে যায় তা বোঝা মুশকিল৷’’
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পালানো ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, এপিবিএন, আরআরআরসি, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে৷ এরপরও কিছু বিছিন্ন ঘটনা ঘটছে এবং প্রতিটি ঘটনার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে৷’’
‘‘পালাতে সহায়তাকারী দালালদের আটক এবং এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে৷ নতুন করে যাতে কোনো রোহিঙ্গা পালাতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা পাচারের সাথে জড়িতদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে৷’’
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)