ভুটানের সপ্তদশ শতকের গুহাচিত্রের সংরক্ষণ চলছে
১৫ জানুয়ারি ২০১১ভুটানের দুর্গম কিছু এলাকার প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্প, বিশেষ করে গুহাচিত্রগুলির সংরক্ষণের কাজ চলছে প্রায় তিন বছর ধরে৷ প্রায় পঞ্চাশটির মত প্রাচীন এবং অসামান্য শিল্পদক্ষতার গুহাচিত্রকে সংরক্ষণ এবং পরিমার্জনের পর এতদিনে সেগুলির বিষয়ে খবর প্রচারিত হল বিশ্বজুড়ে৷ ব্রিটিশ সংস্থা কোর্টলাউলড ইনস্টিট্যুটের সহায়তায় এবং ভুটানের সংস্কৃতিমন্ত্রকের প্রযোজনায় এই দুরূহ কাজে সাফল্য পাওয়ার পর বোঝা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরণের উন্নত মানের শিল্প খুব একটা বেশি নেই, যা আজও স্বমহিমায় রয়ে গেছে ভুটানের কিছু গুহায়৷
কোর্টলাউলড ইনস্টিট্যুটের তরফে এই কাজের দায়িত্বে থাকা লিজা শেকেডে এবং তাঁর সহকর্মী স্টিফেন রিকবেরি সাংবাদিকদের এই কাজের সাফল্যের বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, গুহাচিত্রের সন্ধানে এই তিন বছরে প্রায় দু'শোরও বেশি মন্দিরে গেছেন তাঁরা৷ কোন কোন মন্দিরে পৌঁছতে দুর্গম পাহাড়ি পথে সারাদিন ধরে ট্রেকিং করতে হয়েছে তাঁদেরকে৷ ‘কিন্তু এইসব মন্দিরের গুহাচিত্র আমাদের পরিশ্রমকে সার্থক করেছে৷' বলেছেন লিজা৷
করারই কথা৷ লিজার জবানিতে, সপ্তদশ শতকে গুহার গায়ে উৎকীর্ণ কিছু কিছু বৌদ্ধ ছবিতে পাওয়া গেছে খাঁটি সোনার পাতের সন্ধান৷ দেখা গেছে, ছবিতে পালিশ আনতে শিল্পীরা যে সমস্ত জৈব রাসায়নিক ব্যবহার করেছেন তাও চমকে দেওয়ার মত৷ সবচেয়ে বড় কথা, এইসব ছবির অধিকাংশের মান এবং শিল্পের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি৷ আজকের দিনে সেগুলির দিকে তাকালে বিস্মিত হয়ে ভাবতে হয়, কী অসাধারণ উৎকর্ষের অধিকারী এইসব ছবি!
ভুটানের বিভিন্ন বৌদ্ধগুহায় সন্ধান পাওয়া এইসব ছবিগুলির সংরক্ষণের জন্য এখন বিশেষ করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কোর্টলাউলড ইনস্টিট্যুট৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভারত এবং তিব্বতের অনুরূপ সব বৌদ্ধগুহায় প্রাচীন শিল্পীদের এঁকে যাওয়া বহু দুর্মূল্য গুহাচিত্র নষ্ট হয়ে গেছে আধুনিক পরিষ্কার করার রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহারের কারণে৷ আর সেকথা ভেবেই ভুটানের এই অমূল্য শিল্পসম্পদকে বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷
লিজা নিজেই জানিয়েছেন, পাশ্চাত্ত্যের শিল্পরসিকরা বহু বছর ধরে এ ধরণের গুহাগুলিতে এসে এবং ভুলভাল পরামর্শ দিয়ে প্রাচ্যের এ জাতীয় ঐতিহ্যের যথেষ্ট সর্বনাশ করেছে৷ সে পথে যাতে এই সদ্য পুনরুদ্ধার করা গুহাচিত্রগুলিরও নাশ না হয়, সেদিকেই এখন বেশি মনোযোগী পাশ্চাত্ত্যেরই একটি সংস্থা৷ তবে ভুটানের সংস্কৃতিমন্ত্রক এই কাজের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে, এটুকুই যা আশ্বস্ত করার মত খবর৷
প্রতিবেদন : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই