ভয় দেখাতে হামলা, রিমান্ড, গ্রেপ্তার?
১ মার্চ ২০২১বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কাশিমপুর কারাগারে মারা যান ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ৷ মারা যাওয়ার পর রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলকায় বিক্ষোভ হয়৷ পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে বাম ছাত্র সংঠনগুলোর মশাল মিছিলে হামলা চালায় পুলিশ৷ তাদের লাঠিপেটায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন৷ এখানেই শেষ নয় এই ঘটনায় আটক সাত জনের বিরুদ্ধে মামলাও করে পুলিশ৷
রোববার প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশ পুলিশ হামলা চালিয়ে পন্ড করে দেয়৷ কয়েকজনকে আটকও করে৷
এদিকে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় শুক্রবার খুলনায় আটক করা হয় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিনকে ৷ তার বিরুদ্ধে জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে৷
অবশ্য সোমবার বাম ছাত্র জোটের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় পুলিশ তাদের আটকে দিলেও কাউকে আটক বা লাঠিপেটা করেনি৷
পুলিশের এই ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের সবচেয়ে বড় পরিচয় পাওয়া গেছে এখনো কারাগারে আটক কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের রিমান্ড আবেদনের মধ্য দিয়ে৷ কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের ৫ মে৷ ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে র্যাব ডিজিটাল আইনে মামলা করে৷ রমনা থানা পুলিশ তদন্ত শেষে এই বছরের ১৩ জানুয়ারি চার্জশিট দেয় সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুন্যালে৷ চার্জশিটে মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করা হলেও আট জনকে বাদ দেয়া হয়৷ তাদের ঠিকানা নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের বাদ দেয়া হয়৷ কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাদের নাম ঠিকানা নিশ্চিত করতে এই মামলার অধিকতর তদন্ত দাবি করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন৷
মামলার তদন্ত নতুন করে দেয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ওপর৷ মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আফছর আহমেদ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন৷ ২৫ ফেব্রুয়ারি মুশতাক মারা যান৷ তারপরও ২৮ ফেব্রুয়ারি আদলাতে শুনানি করে কিশোরকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ৷ যদিও আদালত তাদের রিমান্ড আবেদন নাকোচ করে দেন৷
সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুন্যালের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘‘আমরাই অধিকতর তদন্ত চেয়েছি৷ আর সে কারণেই রিমান্ডের আবেদন হয়েছে৷’’
কিন্তু কিশোরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম বলেন, ‘‘একবার চার্জশিট হয়ে গেলে সেই মামলার অধিকতর তদন্তে আসামিদের আবার রিমান্ডে নেয়া যায় না৷ ১০ ফেব্রুয়ারি আবার শুনানি আছে৷ সেখানে আমরা আইনগত দিক তুলে ধরব৷ কিন্তু আইনের কত দিক তখন আবার হয়ে যায় তা বলা যায় না৷’’
কিশোরের ভাই সাংবাদিক আহসান কবির জানান, কাশিমপুর কারাগারে আটক কিশোরের শারীরিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ৷ তাকে এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির করা হলেও ২৮ ফেব্রুয়ারি হাজির করা হয়নি৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আটকের পর কিশোরকে নির্যাতন করা হয়৷ তার পায়ের গোড়ালিতে এখনো ব্যাথা৷ সে খুঁড়িয়ে হাঁটে, কয়েক কদম যাওয়ার পর তাকে অন্যের সহায়তা নিতে হয়৷ পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে৷ তার ডান কানের পর্দা ফেটে গেছে৷ ডায়াবেটিস-এর কারণে সে চোখে ঠিকমত দেখতে পারে না৷’’
তার কথা এই পরিস্থতিতে কিশোরের রিমান্ড আবেদন, ‘‘ভয় দেখানো ও ভিন্ন উদ্দেশ্য ছাড়া আর কোনো কারণেই হতে পারে না৷’’
রিমান্ড আবদনের শুনানির দিন কিশোরের জামিন আবেদন করা হয়নি৷ কারণ ওই তারিখটি গোপন রাখা হয়েছিল বলে জাানান আহসান কবির ৷ তাই সোমবার হাইকোর্টে কিশোরের জামিন অবেদনের শুনানি হয়েছে৷ ৩ মার্চ আদালত এব্যাপারে আদেশ দেবেন৷ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষ আবারও শুনানি করবে৷
মানবাধিকার কশিনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মনে করেন, লেখক মুশতাক কারাগারে মারা যাওয়ার পর পরিস্থতি সামাল দিতে এখন প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশি হামলা, মামলা ও রিমান্ডের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে ভয় সৃষ্টি করে সাময়িক উপশমের পথ খুঁজছে সরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘কারা হেফাজতে মৃত্যুর দায় রাষ্ট্রের, সরকারের৷ সরকারের কাজ হলো একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে সঠিক কারণ জানানো৷ কিন্তু তা না করে তারা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে যাতে মানুষ ভয় পায়৷ যে প্রতিবাদ তৈরি হচ্ছে তা যেন হতে না পারে৷ কিন্তু এটা কোনো সঠিক পথ নয়৷ এতে জনরোষ বাড়ে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘কিশোরকে যে আবার রিমান্ডে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এটাও ভয় দেখানোর জন্য৷ রাষ্ট্রের এই অসুর শক্তি প্রদর্শন কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়৷’’