‘মধ্যপ্রাচ্য সংকট মানবিকতার সংকট'
১১ জুলাই ২০১৪বৃহস্পতিবার থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ নিহতদের ছবি আর খবর নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আর টুইটারে৷ শুক্রবার সকাল থেকে ফেসবুক ছেয়ে যায় নিহত শিশুদের বীভৎস ছবিতে৷ অনেকেই নিজেদের প্রোফাইল ছবিতে হামলা বন্ধের আহ্বান জানান৷
ফেসবুক পাতায় সাঈফ ইবনে রফিক লিখেছেন, ‘‘মুহাম্মদ (সা.) নিজেই যেখানে জেরুসালেম থেকে কেবলা ফিরিয়ে নিয়েছেন, তার উম্মতরা জায়গাটা ছাড়লেই পারে৷ সৌদি আরব, জর্ডান বা ইয়েমেনে হিজরত করলে ফিলিস্তিনিরা প্রাণে বাঁচতো৷ প্রেস্টিজের চেয়ে প্রাণ বড়৷ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পর্যাপ্ত পতিত জমি থাকার পরও আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের জায়গা দেবে না৷
আরব জাতীয়তাবাদের বিক্রি বাড়িয়ে গণবিচ্ছিন্ন সরকারগুলো টিকে থাকার স্বার্থে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করেছে, সন্ধি করেছে৷
ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরবরা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করে নাই৷ আসলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটকে ধর্মযুদ্ধ বলারও উপায় নাই৷ ইয়াসির আরাফাত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেছেন, ঈসা (আ.) যে বেথলেহেমে জন্মেছিলেন সেখানকার খ্রিষ্টানরাও আরাফাতের পক্ষে৷মধ্যপ্রাচ্য সংকটটা আসলে মানবিকতার সংকট, সাম্রাজ্যবাদের সংকট, সভ্যতার সংকট৷ এই সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছে সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, লেবাননসহ আশপাশের আরব দেশগুলোর সরকার৷'
রাশিয়াভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আরটি টিভিতে গাজায় হামলা নিয়ে সংবাদ উপস্থাপিকার মন্তব্য সাড়া ফেলে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ বলা হচ্ছে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে কোন উপস্থাপকের এমন সাহসী মন্তব্য আর দেখা যায়নি৷
সামহয়্যার ইন ব্লগে হিল্লোল লিখেছেন, ‘প্রথম ক্রুসেডের পর যখন খ্রিষ্টানদের হাতে জেরুজালেমের পতন হল , তখন তারা জেরুজালেমে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়, নারী ও বাচ্চাদেরকেও তারা রেহাই দেননি৷ ধারণা করা হয় সে সময় লাখেরও বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ কিন্তু সুলতান সালাউদ্দিন আয়ুইবি যখন জেরুজালেম দখল করেন, সামান্য মুক্তিপণের বিনিময়ে তিনি সবাইকে ছেড়ে দেন৷ আজকে গাজা ইহুদিদের দখলে৷ রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস, আসুন দোয়া করি তাদের জন্য, যারা গাজায় জীবিত আছেন, আর যারা পরলোকে গমন করেছেন৷'
সাদমান সাদেক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফেসবুক হোমপেজ ভরে গেছে ইসরায়েলিদের হামলায় নিহত ফিরিস্তিনি মৃতদেহের ছবিতে৷ চারদিকে কেবলই হায় মুসলিম, হায় মুসলিম রব৷ আর এদিকে গত দুই বছর ধরে সিরিয়ায় মুসলমানরাই মেরেছে লাখখানেক মুসলমানদের৷ ইরাকে আইএসআইএস মুসলমান হয়েও মারছে হাজার হাজার মুসলিম সৈন্যদের৷ জঙ্গিরা মারছে সাধারণ মুসলমানদের৷ পাকিস্তানে সাধারণ মুসলমানরা মারছে খ্রিষ্টানদের৷ এসব হামলায় কারো ভ্রূক্ষেপ নেই৷ কারো ঈমানে আঘাত লাগেনি মোটেও৷ ইসরায়েল মারলেই শুধু আমাদের ঘুম ভাঙে৷ ঈমান জাগ্রত হয় প্রতিনিয়ত৷ ইসরায়েলকে ডিফেন্ড করছিনা৷ গণহত্যাকে সমর্থন করছিনা৷ কিন্তু নিজের ভেতরে, মজ্জায় মিশে থাকা হিপ্যোক্রেসিকে যদি তুলে না ধরি, তবে কেমন মুসলিম হলাম?'
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন