1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মনুষ্যজাতির এক-তৃতীয়াংশই হুমকির মুখে

৯ ডিসেম্বর ২০১১

বিশ্বের মনুষ্যজাতির এক-তৃতীয়াংশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷ এদের অধিকাংশের আবাস আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায়৷ অন্যদিকে, ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঝুঁকি কম৷

https://p.dw.com/p/13PFx
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে খরা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল এবং ঝড় বাড়ছেছবি: DW

দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং শহর হিসেবে ঢাকা - জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার মানুষ৷ অন্যান্য দেশের মধ্যে প্রথম দিকে ভারত এবং কঙ্গো'র অবস্থান৷ যুক্তরাজ্যের ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী সংস্থা মেপেলক্রফট জলবায়ু পরিবর্তনের হার নিরূপণে একটি তালিকা তৈরি করেছে৷ এই তালিকায় থাকা ১৯৩টি দেশের মধ্যে ত্রিশটিকে চরম ঝুঁকিতে থাকা দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ মেপেলক্রফট'এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ, ভারত এবং কঙ্গো'র অবস্থা চরম পর্যায়ে রয়েছে৷ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় রয়েছে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবনাক্ততা বাড়ছে৷ বিশেষ করে সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আঘাত হানতে থাকলে লবনাক্ততা বেড়ে এবং লবন পানিতে পানিবন্দি হয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষের জীবিকা তথা খাদ্য নিরাপত্তা দুটোই ব্যাহত হবে''৷ আইনুন নিশাত মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারকে অর্থ সংগ্রহে আরো উদ্যোগে হতে হবে৷

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অবস্থান

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন্স এবং কম্বোডিয়াও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকিতে আছে৷ তবে এই ঝুঁকির মাত্রা বাংলাদেশ, ভারতের চেয়ে কম৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ো আবহাওয়া'র কারণে এসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে৷

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে খরা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল এবং ঝড় বাড়ছে৷ এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানির স্বল্পতা, খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে৷ সমুদ্রের পানির বাড়ায় তলিয়ে যাচ্ছে জমি৷

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সমাজের অবস্থাও তুলে ধরা হয়েছে মেপেলক্রফট'এর প্রতিবেদনে৷ এসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে তাও পর্যবেক্ষণে রয়েছে৷

ঝুঁকিতে উন্নয়নশীল দেশগুলো

চরম ঝুঁকিতে থাকা ত্রিশটি দেশের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের অবস্থান আফ্রিকায় এবং সবগুলো দেশের সঙ্গেই ‘উন্নয়নশীল' তকমা রয়েছে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকায় খরা, দাবানল, তীব্র বন্যা বাড়ছে৷ মেপেলক্রফট'এর এই গবেষণায় অংশ নেওয়া অন্যতম লেখক চার্লি বেলডন জানান, জলবায়ুজনিত ক্ষতির মাত্রা কম হওয়া সত্ত্বেও সেখানে অনেক দেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে৷ দুর্বল অর্থনীতি, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের কারণে অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষম হচ্ছে না৷

আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশগুলো যেখানে জলবায়ু তালিকার উপরের দিকে আছে, সেখানে ইউরোপের কিছু দেশের অবস্থা একেবারে নিচের দিকে৷ আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং এস্টনিয়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে তেমন একটা ক্ষতির মুখে পড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কার্বন বিকিরণকারী দেশ চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির তালিকায় যথাক্রমে মধ্যম এবং নিম্ন অবস্থানে রয়েছে৷

শহরের তালিকা

মেপেলক্রফট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম ঝুঁকিতে থাকা শহরের তালিকাও প্রকাশ করেছে৷ এতে শুরুতেই রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা৷ এরপর আদ্দিস আবাবা, ম্যানিলা, কলকাতা এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রামের অবস্থান৷ ভারতের তিনটি শহর মাদ্রাজ, মুম্বাই এবং নতুন দিল্লি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বড় রকমের ঝুঁকিতে রয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে আইনুন নিশাত এর মন্তব্য, ‘‘২০২০ সাল নাগাদ ঢাকার বাসিন্দার সংখ্যা দুই কোটি হবে৷ মানুষ যেভাবে আসছে তাতে বস্তি গড়ে উঠছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামান্য বন্যা হলে সেসব বস্তি ডুবে যাবে৷ কারণ বস্তিগুলোর অবস্থান নিচু অঞ্চলে৷ এছাড়া খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে৷ ঢাকা যেহেতু একেবারে অপরিকল্পিত এবং এতগুলো মানুষের বোঝা নিতে পারবে না, সেজন্য এটার ঝুঁকি অনেক বেশি''৷

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকায় খরা, পাকিস্তান এবং মধ্য আমেরিকার বন্যা, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের পেছনেও ভূমিকা রাখছে এই জলবায়ু পরিবর্তন৷ পরিবেশের এই পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা সামগ্রিকভাবে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক