1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মনোনয়নের প্রথম দিনে মুর্শিদাবাদে খুন কংগ্রেস কর্মী

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১০ জুন ২০২৩

পঞ্চায়েতে মনোনয়ন পেশের প্রথম দিনই রক্ত ঝরল। দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন মুর্শিদাবাদের এক কংগ্রেস কর্মী। আজ মনোনয়নের দ্বিতীয় দিনেও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে অব্যবস্থারও।

https://p.dw.com/p/4SQFP
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম প্রাণহানি হলো মুর্শিদাবাদে
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম প্রাণহানি হলো মুর্শিদাবাদেছবি: Payel Samanta/DW

কংগ্রেস কর্মী খুন

বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েতে ভোটাভুটি দিনক্ষণ ঘোষণা করে।তার ২৪ ঘণ্টা পার হতেই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম প্রাণহানি হলো মুর্শিদাবাদে। খড়গ্রাম থানার অন্তর্গত মাড়গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানকার রতনপুরে ফুলচাঁদ শেখ নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়।

পরিবারের সদস্য ওপ্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় পাড়াতেইতাস খেলছিলেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে ছিলেন বছর তিরিশের ফুলচাঁদ। চার বাইক আরোহী এসে তাদের মারধর করে। ফুলচাঁদকে পরপর কয়েকটি গুলি করে। মৃত্যু হয় কংগ্রেস কর্মীর। নিহতের স্ত্রী এসমিনা খাতুনের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এ কাজ করেছে। যদিও শাসক দল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী আহত হয়েছেন। তারা মুর্শিদাবাদের কান্দি হাসপাতালে ভর্তি। এই কর্মীদের দেখতে শনিবার সকালে হাসপাতালে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি দলীয় কর্মীর খুন প্রসঙ্গে বলেছেন, "২০১৮ সালের মত এবারও তৃণমূল রক্তের হোলি খেলতে চাইছে। তাই শুরুতেই আমাদের এক কর্মীকে খুন করল। ওরা ভোট লুটের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে।"

শাসক-বিরোধী তরজা

মুর্শিদাবাদের ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, "খুনোখুনি শুরু হয়ে গেল। আমরা বলেছি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করা যাবে না। আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমরা আশাবাদী।" অধীর ও শুভেন্দু পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে মামলা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টে। শুক্রবারই তার প্রথম শুনানি হয়েছে। আর সেই দিনই খুন হলেন বিরোধী দলের এক কর্মী।

তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করেছেন। তার বক্তব্য, "যে কোনো মৃত্যুতেই রাজনীতির রং লাগাতে চাইছে বিরোধীরা। গ্রামের মানুষের সমর্থন নেই বুঝতে পেরে তারা এই কৌশল নিয়েছে।"

'অভিষেক নবজোয়ার কর্মসূচিতেই হিংসা রুখতে পারেননি'

শুক্রবারের ঘটনা

খড়গ্রামের খুন ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তির ঘটনা ঘটে শুক্রবার। মুর্শিদাবাদে সালারে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সিপিএমের দাবি, এই জেলারই রানিনগরে তৃণমূলের মদতে দুষ্কৃতীরা তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন পাশে বাধা দিচ্ছিল। জনতার তাড়ায় দুষ্কৃতীরা পিছু হঠে।

শনিবারও হিংসা

আজও জেলায় জেলায় অশান্তি হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের ডোমকলে তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেস কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিডিও অফিসের সামনে থেকে অস্ত্র সহ আটক করা হয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বাপি মোল্লাকে।

বীরভূমের লাভপুরে বিজেপি কর্মীকে মারধর করায় অভিযুক্ত শাসক দল। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে কেঁদে ফেলেন বিজেপি কর্মী। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে অশান্তির খবর মিলেছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার দলের নেতাদের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন বিডিও অফিসে উপস্থিত ছিলেন
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার দলের নেতাদের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন বিডিও অফিসে উপস্থিত ছিলেনছবি: Payel Samanta/DW

রাজভবনে কমিশনার

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আজ কথা বলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার সঙ্গে। নির্বাচনে নিরাপত্তা ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তাদের কথা হয়। রাজ্যপালের মন্তব্য, "যে কোনো ভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।" কমিশনার বোসকে জানিয়েছেন, আধাসেনার বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন। এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজভবনকে চিঠি লিখেছেন অধীর চৌধুরী।

প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন

মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় এবার খুব অল্প। ১৫ই জুনের মধ্যে প্রক্রিয়া সারতে হবে। ভোট ঘোষণার পর মাত্র দিন সাতেক মনোনয়নের সময় মেলায় আদালতে দরবার করেছে বিরোধীরা। প্রশাসনিক স্তরেও যে প্রস্তুতির খামতি রয়েছে, তা প্রথম দিনই বোঝা গিয়েছে। জল্পনার মধ্যে প্রায় হঠাৎ করে ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দপ্তর অনেক জায়গায় প্রস্তুতি নিতে পারেনি।

বিরোধীদের অভিযোগ, হুগলি, দুই বর্ধমান ও ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মনোনয়নপত্রই হাতে পাননি প্রার্থীরা। অনেক জায়গায় মনোনয়নের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ এখনো এসে পৌঁছয়নি। এজন্য কয়েকটি জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীরা বিক্ষোভ দেখান। এই সমস্যা দূর করতে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও নির্বাচন কমিশনের সদর কার্যালয়ে এবং অনলাইনে মনোনয়ন পেশের দাবি ইতিমধ্যে তুলেছে বিরোধী দলগুলি।

হিংসা কি থামবে?

সব আমলেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে হিংসা, মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এবার তৃণমূল শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দলের কর্মীদের হিংসার পথ এড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শনিবার বলেছেন, হিংসায় যুক্ত থাকলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এতে ছবি কী বদলাবে?

সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তৃণমূল ভোট শান্তিতে করাতে চায় বলে মনে হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তেমনই বলেছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা হওয়ায় পরের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু অভিষেক নবজোয়ার কর্মসূচিতেই হিংসা রুখতে পারেননি। তার মানে দলের নিয়ন্ত্রণ ততটা নেই।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এক্ষেত্রে শাসক দলের দায়িত্ব বেশি। তারা যদি মনে করে সবাই মনোনয়ন পেশ করবে ও সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে, তা হলে সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন সম্ভব। প্রকাশ্যে শাসক দলের নেতারা এমনটাই বলেছেন।" তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা এমনও আশ্বাস দিয়েছেন, তারা বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে সাহায্য করবেন। কিন্তু এতে ভরসা করছে না বাম, কংগ্রেস, বিজেপি।''