লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কার দাবি
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪হেফাজতে ইসলাম এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর বহিষ্কার ও গ্রেফতার দাবি করে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এবং শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে৷
ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যান৷ সেখানে গত রবিবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেন – যা তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷
মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী৷ আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী৷ তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী৷'' তিনি বলেন, ‘‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়৷ হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে৷ এদের কোনো কাম নাই৷ এদের কোনো প্রডাকশন নাই৷ শুধু রিডাকশন দিচ্ছে৷ শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে৷''
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘এভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়; প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়৷''
তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘তাবলিগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে৷ নিজেদের তো কোনো কাজ নেই৷ সারা দেশের গাড়ি-ঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়৷''
তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জয় ভাই কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়৷'' টেলিযোগাযোগমন্ত্রী টেলিভিশনের টকশো'রও সমালোচনা করেন৷
হজ নিয়ে ‘আপত্তিকর' মন্তব্য করায় হেফাজতে ইসলাম আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে৷ হেফাজতে ইসলাম বৃহস্পতিবার ঢাকায় এবং শুক্রবার সারাদেশে সমমনা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে৷
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ধর্মদ্রোহী মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার না করলে প্রমাণিত হবে আওয়ামী লীগ নাস্তিবাদী দল৷ পবিত্র হজ ও হাজীদের কটাক্ষ করা, বিদ্রুপাত্মক ভাষায় তাচ্ছিল্য করার স্পর্ধা দেখিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নিউ ইয়র্কে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন তা কেবল একজন উগ্র নাস্তিকের পক্ষেই সম্ভব৷ আমরা অবিলম্বে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি৷''
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘যদি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় তবে দেশের লক্ষ-কোটি নবি প্রেমিক জনতা আবারও ২০১৩ সালের মতো সারাদেশে নাস্তিক-বিরোধী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে৷''
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ইসলামের চার স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হজ৷ তা নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী যে জঘন্য ও কুৎসিত মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা প্রকাশেরও ভাষা আমার জানা নেই৷ হজের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীরাও এধরনের কুৎসিত মন্তব্য করেনি৷''
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী, তিনি বহুবার হজ পালন করেছেন, সেখানে লতিফ সিদ্দিকী এই উক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিশ্বাসের উপরেও চরম আঘাত হেনেছেন৷ বিশ্ব ইজতেমার মাঠের বরাদ্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই দিয়ে গেছেন৷ তাবলিগের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে শ্রদ্ধা ছিল এব্যাপারে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা তারই সুষ্পষ্ট প্রমাণ৷ সেই তাবলিগ সম্পর্কেও লতিফ সিদ্দিকী কটূক্তি করেছেন৷ এই বক্তব্য দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন৷ অবিলম্বে তাঁকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করতে হবে৷''