মহাকাশে সাফল্যের চাবিকাঠি
১৭ জানুয়ারি ২০১৫গত বছর মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা তার ‘ওরিয়ন' এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ‘এসা' তার রোসেটা অভিযানের মাধ্যমে সাফল্যের নতুন চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলো৷ চীনও চাঁদ প্রদক্ষিণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো৷ মহাকাশ কর্মসূচিতে বেসরকারি অংশগ্রহণও বেড়ে চলেছে৷ ‘স্পেস এক্স' প্রাথমিক সমস্যা কাটিয়ে ভবিষ্যতে সাজ-সরঞ্জাম ও মানুষ পরিবহণের কাজে প্রকৃত বিকল্প হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
এসা-র মার্ক ট্যুস্যাঁ-র মতে রকেট প্রযুক্তির উন্নতিই হবে ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের চাবিকাঠি৷ অথচ অ্যামেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ, চীন, ভারত বা জাপান – সবাই এখনো গত শতাব্দীর ষাট বা সত্তরের দশকের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ এমনকি ‘স্পেস এক্স'-ও প্রায় ৩০ বছরের পুরনো রকেট প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ তবে তারা সেই রকেটের গতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য পেয়েছে৷ কিন্তু রকেট প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ সেটা সম্ভব হলে রকেট উৎক্ষেপণের পর প্রথম পর্যায়ের গতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে৷ জিপিএস প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সেই রকেটের অবস্থান নির্ণয় করা হবে৷ ‘স্পেস এক্স' প্রচলিত কিছু প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই পথে কিছুটা অগ্রসর হতে পেরেছে৷ আরও কিছু পরীক্ষার পর তাদের রকেট আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের আরও ‘ফাইন টিউনিং'-এর প্রয়োজন রয়েছে৷
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা এতকাল তার ‘এরিয়ান ৫' রকেটের উপর নির্ভর করে এসেছে৷ মার্ক ট্যুস্যাঁ জানালেন, পর পর ৬৩ বার সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে৷ প্রতিটি অভিযানের পর এসা-র বিজ্ঞানীরা রকেটের যাত্রাপথ ও গতি-প্রকৃতি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন৷ কোনো ত্রুটি দেখা গেলে তা দ্রুত দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ রকেটের উপকরণ এবং তার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উচ্চ মানদণ্ডই এই সাফল্যের রহস্য৷ ২০২০ সালে পরবর্তী প্রজন্মের ‘এরিয়ান ৬' রকেট চালু হবার কথা৷ উন্নত প্রযুক্তির ফলে তার ব্যয়ভার ‘এরিয়ান ৫' রকেটের থেকেও কম হবে৷ ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে এসা বাড়তি সুবিধা পাবে৷
মার্ক ট্যুস্যাঁ এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘স্পেস এক্স'-এর পরিকল্পনার কথা শুনে শুরুতে অনেকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ভবিষ্যতে রকেটের উন্নতির ক্ষেত্রে একে অপরের কাছ থেকে আরও শিখতে হবে বলে তিনি মনে করেন৷ প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে গেলে একই রকেট বার বার ব্যবহারের প্রযুক্তিও রপ্ত করতে হবে৷ অ্যামেরিকা, রাশিয়া ও চীন – এই তিন দেশই বড় ও শক্তিশালী রকেট তৈরির লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ফলে মহাকাশের আরও গভীরে মানুষ পাঠানোর দিন এগিয়ে আসছে৷ মহাকাশে পর্যটনও তখন সম্ভব হয়ে উঠবে