মাংস কম খান, পরিবেশ বাঁচান - সুপারিশ বিজ্ঞানীদের
২৫ জুলাই ২০১১বিজ্ঞানীদের এই দাওয়াই মেনে চললে একদিকে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সাশ্রয় হবে৷ আবার অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো তথা পরিবেশ বিপর্যয়ের মাত্রা হ্রাসেও সহায়ক হবে৷ বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করলেন ৯০ পৃষ্ঠার এক গবেষণা লব্ধ পুস্তক৷ নাম ‘এ মিট ইটার্স গাইড টু ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেল্থ'৷ এতে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে খাবার তালিকায় ছোট্ট পরিবর্তন আনলেই তা পরিবেশ রক্ষায় বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে৷ আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শুধু গ্যাস এবং তেল জাতীয় জ্বালানির দহনই এককভাবে দায়ী নয়৷ বরং এর পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে প্রাণীর ঢেকুরে মিথেন গ্যাসের নির্গমন থেকে নানা প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের জীবনচক্রও৷ যেগুলো আবার বিশ্বমানবের খাবার টেবিলেও নিয়মিত হাজির থাকে৷
ওয়াশিংটনে কর্মরত এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ - ইডাব্লিউজি'এর ঊর্ধ্বতন বিশ্লেষক ক্যারি হ্যামারশ্ল্যাগ বললেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় আমরা গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের বিবেচনায় প্রতিটি খাবারের জন্ম থেকে বিনাশ অবধি কার্বন চক্র বিশ্লেষণ করেছি৷ এমনকি সেগুলো খামারে থাকা অবস্থায় এবং তারপরের ধাপগুলোও বিবেচনা করা হয়েছে৷'' ইডাব্লিউজি যৌথভাবে ওরেগন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রিনমেট্রিক্স কর্পোরেশন পোর্টল্যান্ডের সাথে এই গবেষণার কাজ করেছে৷ এর আওতায় প্রাণীকূলের জন্য ব্যবহৃত খাবার, সেগুলোতে প্রয়োগ করা পোকানিধন বিষ, সার, পশুপালন, বিভিন্ন খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন এবং রান্নার বিভিন্ন ধাপগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷ এমনকি খাবার পর অবশিষ্টাংশ থেকে নির্গত গ্যাস ও সেগুলোর ব্যবস্থাপনার ধাপগুলোও যথাযথভাবে হিসাবে আনা হয়েছে৷ শুধু তা-ই নয়, খামারে চাষ করা মাছ, শস্য, দুগ্ধজাত খাবার এবং শাক-সব্জির উৎপাদন চক্রকেও আনা হয়েছে এই গবেষণার মধ্যে৷
এতোকিছুর পর বিজ্ঞানীদের উপসংহার, দয়া করে সপ্তাহে অন্তত একবার একফালি মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন৷ কারণ মাংসই হচ্ছে মানুষের খাবারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী৷ আবার এগুলোর মধ্যে ভেড়ার মাংস থেকে নির্গত হয় সবচেয়ে বেশি কার্বন৷ বিজ্ঞানীদের হিসাবে, এক কেজি ভেড়ার মাংস খেলে কার্বন নির্গত হয় প্রায় ৪০ কেজি৷ এক কেজি গরুর মাংস খাওয়ার অর্থ হচ্ছে ২৭ কেজি কার্বন নির্গমন৷ বিষয়টিকে আরো একটু সহজ করে বলতে গেলে, ১১০ গ্রাম ওজনের এক ফালি ভেড়ার মাংস খাওয়া আর একটি মাঝারি গাড়ি ২১ কিলোমিটার চালানোর ফলে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ সমান৷
তাই বিজ্ঞানী হ্যামারশ্ল্যাগের পরামর্শ, চার সদস্যের একটি পরিবার যদি সপ্তাহে অন্তত একদিন মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাহলে প্রায় তিন মাস গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকার সমান কার্বন নির্গমন ঠেকাতে পারে৷ বৈজ্ঞানিক হিসাবে, বিশ্বের সকল উন্নত দেশের বাসিন্দাদের চেয়ে মার্কিনিরা সবচেয়ে বেশি মাংস খায়৷ এমনকি তা ইউরোপীয়দের চেয়েও বেশি৷ আর এর পরিমাণ হলো বছরে মাথাপিছু ১১০ কেজি করে৷ তাই পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্থুলতা থেকে বাঁচার স্বার্থেও মানুষকে মাংস খাওয়ার হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম