1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটের হার বৃদ্ধি

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি১২ মে ২০১৪

ভারতে এবারের নির্বাচনের সবথেকে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, মাওবাদী এলাকাগুলিতে ভোটের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে৷ তাতে এটাই সূচিত হচ্ছে মাওবাদীদের বজ্রমুষ্টি ক্রমশই ঢিলে হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/1BxtM
Indien Wahlen in Kashmir
ছবি: Bijoyeta Das

ভারতের সাতটি রাজ্য ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িষা এবং পশ্চিমবঙ্গ মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি৷ প্রতিবার নির্বাচনের আগে মাওবাদীদের ভোট বয়কটের ডাকে আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী সাড়া দিতে বাধ্য হত ভয়ে এবং আতঙ্কে৷ কিন্তু ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের অষ্টম পর্বে ৫০২টি আসনের ভোটের পর দেখা গেছে মাওবাদী জঙ্গিদের রক্তচক্ষু এবং ভোট বয়কটের ডাক অগ্রাহ্য করে ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে ঐসব অঞ্চলে৷ গত ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশের মত৷

মাওবাদী গেরিলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র বলে পরিচিত মহারাষ্ট্রের গডচিরোলী এবং দন্ডকারণ্য স্পেশাল জোন কমিটি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভোট পড়ে ৬৯ শতাংশের মত৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে এই হার ছিল বেশ কম৷ উল্লেখ্য, দন্ডকারণ্য ঘন জঙ্গল ঘেরা এক দুর্গম ভূখন্ড৷ ছত্তিশগড়, ওড়িষা, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশ এই চারটি রাজ্য জুড়ে এই ভূখন্ড বিস্তৃত৷

Wahl in Indien 2009
গত ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশের মতছবি: Deshakal Chowdhury/AFP/Getty Images)

অনুরূপভাবে বিহারের জামুই ও মুঙ্গের সংসদীয় আসনগুলিতে ভোটের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ৷ ওড়িষার মালকানগিরিতে অবশ্য এই হার কিছুটা কম৷

ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চল মাওবাদীদের দুর্ভেদ্য গড়৷ গত ১০ এপ্রিল সেখানকার আদিবাসীদের মধ্যে ভোট দেবার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মাওবাদীদের৷ এর কারণ খুঁজতে আদিবাসী এবং উপজাতি প্রতিনিধিদের ডেকে বিভিন্ন জায়গায় গোপন মিটিং করেছে মাওবাদীরা৷

পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে ৭ মে পর্যন্ত চতুর্থ দফার ভোট পর্বে ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ৮১.৪১, ৭৮.৭৫ ও ৮০.৫৫ শতাংশ৷ আর ঝাড়গ্রামের মাওবাদী এলাকায় ভোট পড়ে ৮৮ শতাংশের মত৷

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আপাত কারণ হলো, আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী এতদিন সুদিনের আশায় মাওবাদীর ওপর আস্থা রেখেছিল৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হিংসা, রক্তপাত এবং আতঙ্কের আবহে থাকতে থাকতে তাঁরা ক্লান্ত ও হতাশ৷ এর পরিবর্তনে তাঁরা মরিয়া৷ উন্নয়নের জন্য, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দিন বদলের আশায় তাঁরা চাতক পাখির মত তৃষ্ণার্ত৷

সম্প্রতি ডয়চে ভেলে মাওবাদী ঘাঁটি জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে এটাই দেখেছে, সেখানকার গরিব, নিরন্ন আদিবাসী পরিবারগুলো কীভাবে সুদিনের আশায় ছটফট করছে৷ শুনে এসেছে মাওবাদীদের হাতে কীভাবে দিনের পর দিন অত্যাচারিত হয়েছে৷ কীভাবে রক্ষকরাই হয়েছে ভক্ষক৷

প্রান্তিক আদিবাসী গ্রামগুলির জওয়ান ছেলেদের টাকা আর ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে গেরিলা ট্রেনিং দিয়ে ক্যাডার বানিয়েছে মাওবাদী নেতারা৷ তোলা আদায় করেছে গরিব মানুষদের কাছে৷ দিতে না পারলে উনুন জ্বালানো বন্ধ আর অরন্ধনের আদেশ দিয়েছে৷ পুলিশের চর সন্দেহে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে লাশ৷ জ্বালিয়ে দিয়েছে আদিবাসীদের ঘর আর সরকারি প্রাথমিক স্কুল৷ নিরাপত্তা বাহিনীকে আটকাতে রাস্তাঘাট কেটে মাইন পুঁতে রাখে৷ আধা সামরিক বাহিনীর হাতে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতারা নিহত বা ধরা পড়ার পর তাঁরা এখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে৷ নিরাপত্তাবোধ কিছুটা ফিরে এসেছে৷ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে৷ দু টাকা কিলো দরে নিয়মিত চাল পাচ্ছে৷ ঘর তোলার জন্য সাহায্য পাচ্ছে৷ তাই ভোটে তাঁদের উৎসাহ বেড়েছে৷ এটাকে টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন সরকারের উচিত নিরাপত্তার পাশাপাশি সর্বাত্মক উন্নয়নে গতি আনা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য