ভোটের হার বৃদ্ধি
১২ মে ২০১৪ভারতের সাতটি রাজ্য ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িষা এবং পশ্চিমবঙ্গ মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি৷ প্রতিবার নির্বাচনের আগে মাওবাদীদের ভোট বয়কটের ডাকে আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী সাড়া দিতে বাধ্য হত ভয়ে এবং আতঙ্কে৷ কিন্তু ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের অষ্টম পর্বে ৫০২টি আসনের ভোটের পর দেখা গেছে মাওবাদী জঙ্গিদের রক্তচক্ষু এবং ভোট বয়কটের ডাক অগ্রাহ্য করে ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে ঐসব অঞ্চলে৷ গত ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশের মত৷
মাওবাদী গেরিলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র বলে পরিচিত মহারাষ্ট্রের গডচিরোলী এবং দন্ডকারণ্য স্পেশাল জোন কমিটি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভোট পড়ে ৬৯ শতাংশের মত৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে এই হার ছিল বেশ কম৷ উল্লেখ্য, দন্ডকারণ্য ঘন জঙ্গল ঘেরা এক দুর্গম ভূখন্ড৷ ছত্তিশগড়, ওড়িষা, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশ এই চারটি রাজ্য জুড়ে এই ভূখন্ড বিস্তৃত৷
অনুরূপভাবে বিহারের জামুই ও মুঙ্গের সংসদীয় আসনগুলিতে ভোটের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ৷ ওড়িষার মালকানগিরিতে অবশ্য এই হার কিছুটা কম৷
ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চল মাওবাদীদের দুর্ভেদ্য গড়৷ গত ১০ এপ্রিল সেখানকার আদিবাসীদের মধ্যে ভোট দেবার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মাওবাদীদের৷ এর কারণ খুঁজতে আদিবাসী এবং উপজাতি প্রতিনিধিদের ডেকে বিভিন্ন জায়গায় গোপন মিটিং করেছে মাওবাদীরা৷
পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে ৭ মে পর্যন্ত চতুর্থ দফার ভোট পর্বে ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ৮১.৪১, ৭৮.৭৫ ও ৮০.৫৫ শতাংশ৷ আর ঝাড়গ্রামের মাওবাদী এলাকায় ভোট পড়ে ৮৮ শতাংশের মত৷
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আপাত কারণ হলো, আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী এতদিন সুদিনের আশায় মাওবাদীর ওপর আস্থা রেখেছিল৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হিংসা, রক্তপাত এবং আতঙ্কের আবহে থাকতে থাকতে তাঁরা ক্লান্ত ও হতাশ৷ এর পরিবর্তনে তাঁরা মরিয়া৷ উন্নয়নের জন্য, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দিন বদলের আশায় তাঁরা চাতক পাখির মত তৃষ্ণার্ত৷
সম্প্রতি ডয়চে ভেলে মাওবাদী ঘাঁটি জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে এটাই দেখেছে, সেখানকার গরিব, নিরন্ন আদিবাসী পরিবারগুলো কীভাবে সুদিনের আশায় ছটফট করছে৷ শুনে এসেছে মাওবাদীদের হাতে কীভাবে দিনের পর দিন অত্যাচারিত হয়েছে৷ কীভাবে রক্ষকরাই হয়েছে ভক্ষক৷
প্রান্তিক আদিবাসী গ্রামগুলির জওয়ান ছেলেদের টাকা আর ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে গেরিলা ট্রেনিং দিয়ে ক্যাডার বানিয়েছে মাওবাদী নেতারা৷ তোলা আদায় করেছে গরিব মানুষদের কাছে৷ দিতে না পারলে উনুন জ্বালানো বন্ধ আর অরন্ধনের আদেশ দিয়েছে৷ পুলিশের চর সন্দেহে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে লাশ৷ জ্বালিয়ে দিয়েছে আদিবাসীদের ঘর আর সরকারি প্রাথমিক স্কুল৷ নিরাপত্তা বাহিনীকে আটকাতে রাস্তাঘাট কেটে মাইন পুঁতে রাখে৷ আধা সামরিক বাহিনীর হাতে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতারা নিহত বা ধরা পড়ার পর তাঁরা এখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে৷ নিরাপত্তাবোধ কিছুটা ফিরে এসেছে৷ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে৷ দু টাকা কিলো দরে নিয়মিত চাল পাচ্ছে৷ ঘর তোলার জন্য সাহায্য পাচ্ছে৷ তাই ভোটে তাঁদের উৎসাহ বেড়েছে৷ এটাকে টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন সরকারের উচিত নিরাপত্তার পাশাপাশি সর্বাত্মক উন্নয়নে গতি আনা৷